মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫
 

জুলাই ঘোষণাপত্র ২০২৫, যা থাকছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫

---

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হলো, যা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির পথে একটি মাইলফলক। এ দলিল জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ত্যাগ ও বিজয়ের প্রতিচ্ছবি

রিয়াজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রেক্ষাপট ও পটভূমি
১. স্বাধীনতার বীজ ও আত্মত্যাগ
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়। সেই সংগ্রামের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সাম্যের রাষ্ট্র।

২. আদর্শচ্যুতি ও বিকৃতি
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের সংবিধান কাঠামোগত দুর্বলতায় গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসন এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।

৩. সিপাহি-জনতার বিপ্লব ও গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন
১৯৭৫ সালে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

৪. ১/১১ ও ফ্যাসিবাদের উত্থান
২০০৭ সালের তথাকথিত জরুরি শাসন গণতন্ত্রকে বিকৃত করে ফ্যাসিবাদী আধিপত্যের ভিত্তি গড়ে দেয়, যার পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে শেখ হাসিনার দীর্ঘ একচ্ছত্র শাসনের মাধ্যমে।

গণবিরোধী শাসন ও তার প্রতিক্রিয়া
৫. ফ্যাসিবাদ ও অবৈধ সংবিধান পরিবর্তন
গত ১৬ বছরে অবৈধ সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিলুপ্ত ও একদলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।

৬. মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
গুম, খুন, মতপ্রকাশে বাধা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে পড়ে।

৭. আর্থিক দুর্নীতি ও পরিবেশ বিপর্যয়
‘উন্নয়ন’ আড়ালে ঘটে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, জলবায়ু ও পরিবেশ ধ্বংস।

৮. ছাত্র ও তরুণদের ওপর নিপীড়ন
চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এক ভয়াবহ রূপ নেয়।

অভ্যুত্থান ও জনগণের বিজয়
৯. বিচারের দাবিতে উত্তাল ছাত্র-জনতা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে ছাত্র-জনতা ফুঁসে ওঠে। হত্যাকাণ্ড ও দমন-পীড়ন অভ্যুত্থানের রূপ নেয়।

১০. সমাজের সর্বস্তরের অংশগ্রহণ
ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমজীবী মানুষ একাত্ম হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

১১. গণভবনমুখী পদযাত্রা ও ফ্যাসিস্ট পতন
৫ আগস্ট ২০২৪: গণভবন ঘিরে উত্তাল ঢেউয়ের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। ফ্যাসিবাদ পতন হয়।

নতুন শাসনব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের রূপরেখা
১২. অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
৮ আগস্ট ২০২৪, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

১৩. গণশক্তির আইনসম্মত স্বীকৃতি
এই অভ্যুত্থান রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ গণ-প্রতিনিধিত্বের বহিঃপ্রকাশ।

ঘোষণা ও অঙ্গীকার
১৪. ফ্যাসিবাদবিরোধী অপরাধের বিচার
গুম-খুন, গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে।

জাতীয় বীরদের সম্মান
জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা এবং আহতদের জন্য আইনি সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হবে।

নতুন নির্বাচন ও সাংবিধানিক সংস্কার
জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবাধ নির্বাচন আয়োজন ও সংস্কারকৃত সংবিধানে এই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ভবিষ্যতের সমাজ ও রাষ্ট্রের রূপরেখা
একটি পরিবেশবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ জাতি।
এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় পূনর্নিমাণের অঙ্গীকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করল।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon