সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫
 

জাবিতে জুলাই আন্দোলনে হামলা: প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিচারের বাইরে দুই শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ আগস্ট ২০২৫

---
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার ঘটনায় উস্কানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়া আওয়ামীপন্থি দুই শিক্ষক এখনও কোনো ধরনের তদন্ত বা শাস্তির মুখোমুখি হননি। অন্যদিকে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই দুই শিক্ষক ক্লাস বা পরীক্ষায় জড়িয়ে পড়ায় তাদের ফলাফলও প্রভাবিত হতে পারে।

যেসব শিক্ষক এখনো বিচারের আওতায় আসেননি, তাদের মধ্যে রয়েছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শফিক-উর-রহমান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবউন্নেসা।

জানা যায়, ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর পরদিন থেকে পুনরায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার ও ঘটনার বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ১৭ জুলাই, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্ররোচনায় সিন্ডিকেট কর্তৃক আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ওই সময় সিন্ডিকেট সদস্য ও আওয়ামীপন্থী কয়েকজন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা তাদের হামলা করেছে এমন মিথ্যা দাবি করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

পুলিশ প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেখে আন্দোলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তবে আলোচনা চলাকালে প্রশাসনিক ভবনের ভেতর থেকে তৎকালীন প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষকরা একাধিকবার ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার নির্দেশ দিতে থাকেন। এরপরই পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এমনকি আহত শিক্ষার্থীদের অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে লাঠি ও রড দিয়ে পেটানো হয়। এতে বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন এবং প্রাণভয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন।

এ ঘটনার পর আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফাঁস হওয়া বার্তাগুলোতে দেখা যায়, অধ্যাপক শফিক-উর-রহমান শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দমনপীড়নের পক্ষে মত দেন। অপরদিকে অধ্যাপক জেবউন্নেসা শিক্ষার্থীদের ধিক্কার জানিয়ে পুলিশি অ্যাকশনের পক্ষে অবস্থান নেন। এসব বার্তায় তাদের প্রত্যক্ষ উসকানি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৯ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আরও ১০ শিক্ষকসহ বরখাস্তদের বিরুদ্ধে একটি স্ট্রাকচার্ড কমিটিও গঠিত হয়। তবে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যাপক শফিক ও অধ্যাপক জেবউন্নেসার নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই দুই শিক্ষকের বিচারের আওতায় না আসা ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তাদের উসকানিতেই পুলিশ সেইদিন অমানবিক হামলা চালিয়েছে। অবিলম্বে এই দুই শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত কমিটির কাছ থেকে পাওয়া খসড়া তালিকায় উক্ত দুইজন শিক্ষকের নাম ছিল না। কী কারণে তারা বাদ পড়েছেন, তা তদন্ত কমিটিই ভালো বলতে পারবে।”

এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের মুঠোফোনে পরপর ২দিন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon