খাদেমুল ইসলাম ফরহাদ, ইবি :
রাজধানীতে চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল নেতা কর্তৃক সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক তানভির মাহমুদ মন্ডল, ইয়াসিরুল কবির সৌরভ ও গোলাম রাব্বানী সহ কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘চব্বিশের বাংলায় চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই, ‘চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, চাঁদাবাজের বিচার চাই’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘যুবদলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ও ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাঁদাবাজ নো মোর’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ডায়না চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য চলাকালে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সেখানে শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলার একজন নাগরিককে চাঁদা না দেওয়ার অজুহাতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। কারা করেছে সেটা জাতির কাছে স্পষ্ট হয়েছে, তারা মানুষকে হত্যাই করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তার লাশের উপর দাঁড়িয়ে নিত্য করেছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই ২৪ উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের যারা চাঁদাবাজ কায়েম করতে চাইবে তাদেরকে জনগণ কখনই মেনে নেবে না।’
তারা আরও বলেন, ‘যারা একের পর এক ধর্ষণ চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। তাদেরকে বলতে চাই আমরা এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আন্দোলন করিনি। ইন্টারিম গভর্নমেন্টকে বলে দিতে চাই, আপনারা আপনাদের মেরুদন্ড সোজা করুন। আপনাদেরকে বিপ্লবী জনতা ক্ষমতায় বসিয়েছে। মানুষ মারা যাবে কিন্তু আপনারা তার বিচার করতে পারবেন না জনগণ তাহলে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিবে। অপরাধী যেই দলেরই হোক তার সর্বোচ্চ বিচার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ইয়াসিরুল কবির সৌরভ বলেন, ‘আমরা তাদের মুখে বারবার শুনি নির্বাচন না দিলে নাকি দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক হবে না। কিন্তু আমরা এটাও দেখতে পাই যে নির্বাচন না হওয়ার কারণে ওই সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি খুনের রাজনীতি করতেছে। এই খুনের রাজনীতি তারাই কায়েম করতে চায় আর তারাই বলতেছে নির্বাচন চাই। আমরা দেখতে পাই গত ১৭ বছর একটি সরকার স্বৈরাচারী শাসন কীভাবে কায়েম করেছিল, কীভাবে একটা সরকার মিডিয়াকে কন্ট্রোল করেছিলো। আমরা দেখতে পেরেছি যে ৯ জুলাই কীভাবে একটা ব্যবসায়ী ভাইকে চাঁদার জন্য নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই খুনিদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, রাজধানীতে চাঁদা না দেওয়ায় সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার (০৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এ ঘটনা ঘটে। সেদিনই পুলিশ যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে আটক করেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শতাধিক মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
মন্তব্য