শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
 

সাবেক এমপি ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীঃ তুখোর রাজনীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২৫

---

আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ রিপোর্টার

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী একটি আলাদা নাম। তিনি প্রভাব বা পেশীশক্তির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন— বরং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসাই তার আসল শক্তি।তুখোর জ্ঞান,নীতি ও মানবিকতার মিশেলে তৈরি এই রাজনীতিবিদ চিকিৎসা পেশা থেকে জনসেবার রাজনীতিতে এসে গেছেন এক অন্যরকম অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে।

১৯৫২ সালের ২১ মার্চ পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী। পেশায় তিনি একজন যোগ্য শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসা জীবনে তিনি সততা ও সেবার মানসিকতায় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেন। পরবর্তীতে জনগণের প্রত্যাশায় সাড়া দিতে রাজনীতিতে যোগ দেন।

১৯৮৬ সালে সততার প্রতীক হিসেবে তিনি মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি স্থানীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের একটি নতুন ধারা তৈরি করেন। ডাঃ ফরাজীর রাজনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার বহুদলীয় রাজনৈতিক অভিযাত্রা, যেখানে দল নয়— জনগণই তার মূল ভিত্তি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।

২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির (মহাজোটের অংশ হিসেবে) প্রার্থী হয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখেন।

ডাঃ ফরাজী এমন একজন রাজনীতিক, যিনি কখনো রাজনৈতিক বলয় বা কর্মী বাহিনীর উপর নির্ভর করেননি। বরং জনসম্পৃক্ততা ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির মাধ্যমেই তিনি মঠবাড়িয়া তথা পিরোজপুরে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।ডাঃ ফরাজী বলেন,”শক্তিশালী কর্মী সংগঠন নয়, আমার শক্তি হলো জনগণের ভালোবাসা ও বিশ্বাস।”

ডাঃ ফরাজী সংসদ সদস্য থাকাকালীন একাধিকবার প্রতিপক্ষের রোষানলে পরেন।নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষ প্রায়ই তাকে  “অবাঞ্ছিত” ঘোষণা করা হলেও জনগণের রায়ের মাধ্যমে তিনি বারবার সংসদে প্রবেশ করেছেন।

রাজনৈতিক ও চিকিৎসা জীবনের পাশাপাশি তিনি শিক্ষাক্ষেত্রেও রেখেছেন উজ্জ্বল দাগ। মঠবাড়িয়ার উত্তর সোনাখালী গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত “ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী ডিগ্রি কলেজ” আজ অনার্স ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য তরুণ-তরুণীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই প্রতিষ্ঠান।

২০২৪ সালের আগস্টে ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেন এবং পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে “হাতপাখা” প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে— তিনি ক্ষমতার রাজনীতি নয়, আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী কেবল একজন রাজনীতিক নন; তিনি এক জীবন্ত প্রেরণা। তার পুরো রাজনৈতিক জীবন শেখায়— “রাজনীতি মানে প্রতিপক্ষকে হারানো নয়, বরং মানুষের আস্থা অর্জন করা।”

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon