মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
 

পিরোজপুর-২ এ মুখোমুখি মঞ্জু ও সাঈদী পরিবারের উত্তরসূরিরা শামীম সাঈদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৫

---

মো. শামীম হোসাইন

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত আসন পিরোজপুর-২। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী সোহেল মঞ্জুর সুমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে ও জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী শামীম সাঈদীর বিপরীতে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া ইসলামী ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল পিরোজপুরের তিন আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সেখানে পিরোজপুর-২ আসনে সাঈদীর ছেলেকে প্রার্থী ঘোষণা করেন তিনি।

ফলে আসনটি এখনো আলোচিত। এর কারণ হলো, একদিকে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির প্রবীণ নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জুর উত্তরসূরি আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন, অন্যদিকে জামায়াতের প্রভাবশালী পরিবার সাঈদী পরিবারের উত্তরাধিকার শামীম সাঈদী।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিরোজপুর-২ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আলোচিত আসন হতে যাচ্ছে, যেখানে বিএনপি ও জামায়াত, দুই জোটভুক্ত দলেরই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। তাঁদের কথায়, ভাণ্ডারিয়ার মাঠে এবার ভোটযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক নয়, উত্তরাধিকারেরও লড়াই।

মঞ্জুর ছেলে সুমন পেলেন বিএনপির মনোনয়ন

নির্বাচনের ডামাডোলে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন। পিরোজপুর-২ আসনে (কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ছেলে, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় উৎসবের আমেজ। ভাণ্ডারিয়া বাজার থেকে নেছারাবাদের গ্রামাঞ্চল—সবখানেই চলছে স্লোগান আর মিষ্টি বিতরণ।

দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উচ্ছ্বসিত তাঁর প্রার্থিতায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এবার এমন একজন কর্মীবান্ধব ও জনপ্রিয় প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং স্থানীয়ভাবে দৃঢ় সাংগঠনিক অবস্থান তৈরি করেছেন। তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যও এলাকায় বিশেষ প্রভাব রাখে।

সোহেল মঞ্জুর সুমন বলেন, ‘এই আসনে অনেক যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। তার পরও দল আমাকে যে আস্থা দিয়েছে, তা রক্ষা করব জনগণের ভালোবাসায়।

ইনশাআল্লাহ, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে পিরোজপুর-২ আসন বিএনপিকে উপহার দেব।’

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে সুমনের প্রার্থিতা বিএনপির ঘরে নতুন উদ্দীপনা জোগাবে। অন্যদিকে, জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। ভাণ্ডারিয়ার চায়ের দোকান, কাউখালীর মোড় কিংবা নেছারাবাদের হাটে এখন একটাই আলোচ্য, মঞ্জুর  পরিবারের উত্তরসূরি মাঠে, পিরোজপুরে ভোটযুদ্ধ এবার জমে উঠবে!

মঞ্জুর বর্ণাঢ‌্য রাজ‌নৈ‌তিক জীবন

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর-২ আসন (কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নূরুল ইসলাম মঞ্জু। এর আগে পাকিস্তান আমলে তিনি এমএনএ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সদস্য) ছিলেন।

দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্বও সামলেছেন মঞ্জু। তবে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেল হত্যা মামলায় দলের শীর্ষ নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে আদালত তাঁকে সেই মামলায় অভিযোগ থেকে খালাস দেন। ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পিরোজপুর-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন। তবু দলের হয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন শেষ পর্যন্ত তিনি।

নূরুল ইসলাম মঞ্জুর তৃতীয় ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন বর্তমানে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি। পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। নুরুল ইসলাম মঞ্জুর স্ত্রী ডা. সুফিয়া বেগম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে অবসর নেন।

জামায়াতের প্রার্থী শামীম সাঈদী

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর বালিপাড়া ইউনিয়নের সাঈদখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমির ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার, ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের প্রাথী হিসেবে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। তবে ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে শামীম সাঈদীর দেখা মেলেনি ভোটের মাঠে। এমনকি ওই সময় তাঁর পক্ষে কোথায়ও কোনো প্রচার ছিল না। গত ৫ আগস্টের পরও এলাকায় তেমন একটা যাতায়াত ছিল না তার। কিন্তু পিরোজপুর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে মাঝেমধ্যে পিরোজপুর আসছেন তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon