যুগের কণ্ঠস্বর ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তবে এবারের নির্বাচনে ফলাফলের প্রাথমিক চিত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠছে—পরম্পরাগত ভারসাম্য ভেঙে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট।
ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন মো. আবু সাদিক কায়েম। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ৮.৩০ এ চুড়ান্ত ঘোষিত ১৮টি হলের ফলাফল অনুযায়ী তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার সবচেয়ে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদল সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান, পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৬৫৮ ভোট। ফলে প্রায় তিন গুণ ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সাদিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা ও শামীম হোসেনও উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছেন, তবে প্রতিযোগিতা মূলত ভিপি পদে দুই বড় ছাত্র সংগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
একই চিত্র জিএস পদেও। শিবির সমর্থিত এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৯৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট, আর প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট।
এজিএস পদেও আধিপত্য দেখাচ্ছে একই জোট। মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ৯ হাজার ৫০১ ভোট, যেখানে ছাত্রদল সমর্থিত তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ২৫৪ ভোট।
কোন হলে কেমন ফল
ঘোষিত ফলাফলে ছাত্রদের বেশিরভাগ হলেই সাদিক কায়েম ও তার সহযাত্রীরা জয়ী হলেও ব্যতিক্রম জগন্নাথ হল। এখানে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম (১২৭৬ ভোট)। অন্যদিকে, রোকেয়া হল ও সুফিয়া কামাল হলে নারী শিক্ষার্থীরা ভিন্ন রকম চিত্র উপহার দিয়েছেন—সাদিক কায়েম শীর্ষে থাকলেও উমামা ফাতেমা ও শামীম হোসেনও তুলনামূলকভাবে ভালো ভোট পেয়েছেন।
সমীকরণের বদল
ডাকসুর ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার (৩৯,৮৭৪ জন)। এদের মধ্যে ছাত্র হলে প্রায় ২১ হাজার, আর ছাত্রী হলে প্রায় ১৯ হাজার। দীর্ঘদিন পর এই বিশাল ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফলাফলের প্রাথমিক ধারা ইঙ্গিত দিচ্ছে—প্রথাগত ছাত্রদল-ছাত্রলীগ প্রভাবের বাইরে একটি নতুন শক্তি জায়গা করে নিচ্ছে।
কেন তা তাৎপর্যপূর্ণ?
ভিপি, জিএস ও এজিএস—তিনটি শীর্ষ পদে একই জোটের সম্ভাব্য জয় এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে ডাকসু নির্বাচন সব সময় জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে ধরা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীদের এই অগ্রযাত্রা অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত হলেও এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার আভাস মিলছে।
মন্তব্য