শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
 

মর্মবেদনা, আত্মত্যাগ ও চ্যালেঞ্জিং পেশা সাংবাদিকতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫

 ---

সাংবাদিক জাকির হোসেন

সংবাদভাষা ও সাহিত্যিক মৃত্যু রূপে একসঙ্গে রূপান্তর কিছু কথা বলে যাচ্ছি । এতে থাকবে সাংবাদিকতার বাস্তব চিত্র, আর সেই চিত্রের মধ্যে এক ধরনের আবেগ, মর্মবেদনা ও আত্মত্যাগের ভাষা, যেন এটি বিশ্বময় পাঠকের দৃঢ় প্রত্যয়।

সাংবাদিক হত্যার শব্দ নেই—আছে নীরব কফিন আর থেমে যাওয়া কলম

সংবাদে লেখা হয়:

“অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। নিহত সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করতেন।” কিন্তু এই দু’লাইনেই শেষ হয় না এক সাংবাদিকের জীবন। শেষ হয় না তার লড়াই, তার অদেখা কান্না, না বলা গল্প।

আমরা যারা সাংবাদিক, তারা খবর লিখি।  কিন্তু যখন খবরের শিরোনামে নিজেরাই পরিণত হই, তখন আর শব্দ থাকে না—থাকে স্তব্ধতা, থাকে থেমে যাওয়া কলম।

লেখার দায়, মৃত্যুর কারণ,

সত্য লেখা এখন অপরাধ। একটি রিপোর্টে উঠে এলে কার কী অপরাধ, কার কোন জমি দখল, কিংবা কোন থানা মামলা নিচ্ছে না—তাহলেই শুরু হয় হুমকি।

“ভাই, লিখেন না।”

“দেখেন, বিপদে পড়বেন।”

“এইসব ঠিক না।”

শুরুতে ফোন আসে, পরে চোখ রাঙানি, তারপর হয়তো ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’। আমরা বুঝেও বুঝি না, বলতেও পারি না—কারণ আমরা সমাজ সচেতন হওয়ার লক্ষ্যে কলম চালাই,

কলমের জোর ছাড়া কোন ঘাঁটি নেই, পেছনে পিস্তল নেই।

 স্মরণে সেই নামগুলো, যাদের খবর আর কেউ রাখে না

 

গৌরী লংকার, সাগর-রুনি, দিল মনোয়ার—এই নামগুলো আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করে।

কেন তারা খুন হলো?

কেন বিচার হলো না?

কেন নতুন প্রজন্ম ভয় পায় রিপোর্ট করতে?

সাগরের কলম থেমে গেছে, রুনির ক্যামেরা নিস্তব্ধ।

গৌরীর সাহস এখন আর কাগজে ছাপা হয় না—ওরা মরে গেছে, বেঁচে গেছে একটা প্রশ্ন রেখে:

“সত্য বলার মূল্য কি জীবন?”

সংবাদ সংগ্রহ নয়, যেন জীবন সংগ্রাম

গ্রামগঞ্জে রিপোর্ট করতে যাওয়া মানে শুধু খবর নেওয়া না, বরং নিজের জীবন নিয়ে বাজি ধরা। কোথাও গেলে বলা হয়, “আপনি সাংবাদিক? ছবি তুলবেন না।”

কখনো ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়, কখনো চুল ধরে টেনে ফেলা হয়।

সাংবাদিকতা যেন এখন যুদ্ধের মাঠ, আর আমরা সংবাদ সৈনিক—সুরক্ষা ছাড়া।

শেষে থেমে যায় কণ্ঠ, পড়ে থাকে ডায়েরি, একজন সাংবাদিক মরে গেলে তার ডেস্কে পড়ে থাকে অর্ধলিখিত প্রতিবেদন, পড়ে থাকে একটা পুরনো ডায়েরি—যেখানে সে লিখেছিল, “কাল প্রতিবেদন জমা দেব।” কিন্তু কাল আর আসে না।

আসে পুলিশ, আসে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স।

ক্যামেরা ফ্রেমে আসে তার মৃতদেহ—

এইবার সে নিজেই হয়ে যায় “শীর্ষ সংবাদ”।

উপসংহার: সত্যের পথে যে হাঁটে, তার ছায়া পড়ে দীর্ঘ

আমি সাংবাদিক জাকির হোসেন।

জানি, আমার লেখায় অনেকের গা জ্বলে।

তবুও লিখবো। কারণ আমি জানি, সত্য বলার জন্য মরতে হতে পারে—কিন্তু মিথ্যার কাছে মাথা নত করা, তার চেয়েও বড় মৃত্যু।

আমার কলম থেমে যাবে একদিন, হয়তো একটা রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে—

কিন্তু আমার শব্দ থেকে যাবে…

আমার কথা থাকবে কোনো তরুণ সাংবাদিকের বুকের সাহসে, যার চোখে তখনও কল্পনায় জল্পনায় স্মৃতি চয়নে জ্বলিবে  আগুন।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon