সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
 

আজ পবিত্র শবে বরাত

কণ্ঠস্বর ডেস্ক, ঢাকা
প্রকাশ: ৭ মার্চ ২০২৩

---

ইমরান হোসেন তালহা: পবিত্র শবে বরাত আজ। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দিনগত রাতে শবে বরাত পালিত হবে।

শবে বরাতের পরিচয়
ফারসি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত, বরাত অর্থ ভাগ্য। তাই শবে বরাত অর্থ ভাগ্যরজনী। যেহেতু এ রাতে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়, তাই একে ভাগ্যরজনী বলা হয়। হজরত ইকরামা (রা.) বলেন, এ রাতে আগামী এক বছরের রিজিক নির্ধারণ করা হয়। আগামী এক বছরে যারা মারা যাবে, যারা জন্মগ্রহণ করবে, তাদের তালিকা এ রাতে নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণের হাতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে আরবি পরিভাষায় এটিকে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। লাইলাতুন অর্থ রাত আর ‘বারাআত’ অর্থ মুক্তি, ক্ষমা। যেহেতু এ রাতে আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, তাই একে মুক্তির রজনী বলা হয়। হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত নামে অভিহিত করা হয়েছে।

শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত। এ রাতে আল্লাহ পাপী বান্দাদের মুক্তি দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কেননা এই দিন সূর্যাস্তের পরই আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছো রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ কথা বলতে থাকেন।’ (ইবন মাজাহ: ১৩৮৮)

এ রাতে আল্লাহ বান্দাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘এ রাতে আল্লাহ তাআলা বনু কালবের ছাগলগুলোর পশমের চেয়ে বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেন।’ (ইবন মাজাহ: ১৩৮৯) কিন্তু বিশেষ কিছু লোক এ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করেন। তবে মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, ব্যভিচারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও অন্যায়ভাবে হত্যাকারীকে ক্ষমা করেন না।’ (ইবন মাজাহ: ১৩৯০)

শবে বরাতে করণীয়
শবে বরাতে বিশেষ কিছু আমল আছে, যা করলে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। এ রাতের করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—

রাতে নফল নামাজ পড়া এবং দিনে
রোজা রাখা: এ রাতে সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করা এবং পরের দিন নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যের কাজ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮) শবে বরাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এ রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায়ের উপদেশ দিয়েছেন।

কোরআন তিলাওয়াত করা: এ রাতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা সওয়াবের কাজ। কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করলে ১০টি নেকি পাওয়া যায়। এ রাতে দোয়া পাঠ করাও উত্তম। তা হলো—আল্লাহম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও। এ রাতে আরও একটি বিশেষ দোয়া করা মোস্তাহাব। যার বঙ্গানুবাদ হলো, ‘হে আল্লাহ, আপনি যদি আমাদের নাম দুর্ভাগ্যদের মধ্যে লিখে রাখেন, তবে তা মুছে দিয়ে সৌভাগ্যবানদের মধ্যে লিখে নিন। আর যদি আমাদের নাম সৌভাগ্যবানদের মধ্যে লিখে থাকেন, তবে তা স্থির রাখুন। কারণ আপনার কাছেই রয়েছে মূল কিতাব।’ (মিরকাত: ৩/১৯৭; হিলইয়া: ৪/১০৩)

কবর জিয়ারত করা: এ রাতে মহানবী (সা.) জান্নাতুল বাকিতে উম্মতের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা এ রাতে আমি মহানবী (সা.)-কে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকি। এরপর আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দুহাত তোলা অবস্থায় পেলাম।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)। এ থেকে আমরা এ রাতে কবর জিয়ারতের বিষয়টি সাব্যস্ত করতে পারি।

শবে বরাতের বর্জনীয়
শবে বরাত পুণ্যময় রজনী। এ রাতে কোনো নোংরা ও গর্হিত কাজ করা অনুচিত। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যা ক্ষতিকর এবং ভীতি সৃষ্টি করে, তা পরিহার করা ইসলামে স্বীকৃত। যেমন—

আতশবাজি ও পটকা ফোটানো: সমাজের একটা শ্রেণি আছে, যারা এ রাতে মাথায় টুপি ও হাতে তসবিহ নিয়ে আতশবাজি ছোড়ে এবং পটকা ফোটায়। অথচ এর মাধ্যমে সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৃদ্ধ ও শিশুরা ভয়ে বের হতে পারে না। এর কারণে যেখানে-সেখানে অগ্নিকাণ্ডও ঘটতে পারে। তাই এসব করা ইসলামস্বীকৃত নয়।

আলোকসজ্জা করা: কোনো কোনো অঞ্চলে এ রাতে অনেক বাড়িঘর, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনা আলোকসজ্জার মাধ্যমে সাজানো হয়। অথচ এগুলোর সঙ্গে এ রাতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল)

হালুয়া-রুটি তৈরি করা: লোকমুখে প্রচলিত আছে—শবে বরাতের কাই কার ঘরে নাই। আসলে এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। কারণ হালুয়া-রুটির সঙ্গে এ রাতের কোনো সম্পর্ক নেই।

ক্ষমার অযোগ্য পাপ না করা: আমরা জেনে-না জেনে নানা পাপ করে থাকি। কিন্তু আল্লাহ এ মহিমান্বিত রাতে যেসব পাপীকে ক্ষমা করেন না, তাদের অন্তর্ভুক্ত যেন না হই। তারা হলো—হিংসুক, জাদুকর, গণক, মা-বাবার অবাধ্য, ব্যভিচারী প্রমুখ।

ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা রাত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মুসলমানরা শবে বরাত পালন করবেন।

ইসলামী বিধানে পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। শাবান মাসে শবে বরাতের পরই পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। তাই শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

শবে বরাত পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে মসজিদগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।

মহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মুসলমানরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon