মো. আমিনুল হক. ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়া, অনিয়ম ও খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিকরাও তার স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে তার উপর অর্পিত দায়িত্বেও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মিটারের মামলা দেওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা
উপজেলার পৌরসভার নয়শিমুল গ্রামের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান। তাঁর মায়ের নামে একটি বিদ্যুতের মিটার রয়েছে। মিটারটি পরিবর্তন করার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন কয়েকবার তাঁদের জানায়। অফিস জানায়, পুরাতন মিটার পরিবর্তন করে প্রিপেইড মিটার লাগাতে হবে। হঠাৎ একদিন তারা মিটার খুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অফিসে যোগাযোগ করেন মো. কামরুজ্জামান। তখন অফিসের স্টাফরা জানান, ‘স্যারকে(আবাসিক প্রকৌশলী) ৫০হাজার টাকা দিয়ে মিটার নিয়ে যান’। তখন কামরুজ্জামান ঘুষ দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে আবাসিক প্রকৌশলীর সাথে দেখা করেন মো. কামরুজ্জামান। তখন আবাসিক প্রকৌশলী তাকে রোববার দেখা করতে বলেন। রোববার সমাধার করা হবে বলে আশ্বাস দেন। রোববার দেখা করতে যান কামরুজ্জামান। গিয়ে দেখেন তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে। সমাধানের কথা বলে এরকম স্বেচ্ছাচারিতায় চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান ‘মিটার আমার মায়ের নাম। কিন্তু মামলা করেছে আমার নামে। তারা ইচ্ছে করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য মামলা দিয়েছে কারণ তারা বলার পরেও আমি মিটার পরিবর্তন করতে দেরি করেছিলাম’।
সাংবাদিকদের সাথেও খারাপ আচরণ
ঈশ্বরগঞ্জে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, অনিয়মের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে আবাসিক প্রকৌশলী তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। শুধু তাই নয়, তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের কাছে ঘুষ চাওয়ার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক। কিন্তু সেই ভিডিও কোনভাবেই দেখানো যায় নি আবাসিক প্রকৌশলী আমির হামজাকে। তিনি বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার কথা ভিডিওতে বললেই কি সত্য হয়ে যাবে নাকি? আপনারা আমার রুম থেকে বের হলে যদি বলি, আমার কাছ থেকে চাঁদা চাইতে এসেছিলেন, সেটাই কি সত্যি হয়ে যাবে?
ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না
কিছুদিন আগে বিদ্যুতের লাইন নামিয়েছেন এরকম কয়েকজনের সাথে কথা হয় বিদ্যুৎ অফিসের সেবা নিয়ে। তাঁরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের ঘনঘন বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হয়। আমরা কিছু বললে পরে আমাদের হয়রানি করা হতে পারে’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, বিদ্যুতের লাইন নামাতে বা মিটার সংযোগ নিতে গেলে নিয়মিত অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত চার্জ থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে আবেদন ফেলে রাখা হয় বা নানা অজুহাত দেখানো হয়। তাঁদের অফিসের ভেতর সমিতি রয়েছে। প্রতি নতুন সংযোগ থেকে আদায়কৃত বাড়তি টাকা সমিতিতে জমা রাখা হয়। পরে তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়’।
অবৈধ সংযোগে প্রশ্রয়
স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অনুরোধ করা হলেও আবাসিক প্রকৌশলী তাতে গুরুত্ব দেন না। বরং ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধ সংযোগ থেকে মাসোহারা নেওয়ার বিষয়েও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ফলে এলাকায় চুরি বিদ্যুতের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আবাসিক প্রকৌশলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমার কাছে ফোন এসেছিল তা সত্যি কিন্তু আমি সময় পাইনি। আমি মাসোহারা নেই এটা যদি আপনারা ভাবেন সেটা আপনাদের ইচ্ছে’।
জনমনে ক্ষোভ
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বৈধ সংযোগ থাকলেও বারবার হয়রানির শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত বিল দিতে হয়। লাইন নষ্ট হলে তাদের পেছনে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।কিন্তু যারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না’। চরহোসেনপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের মিটার খুলে নিয়ে আসে বিদ্যুৎ অফিস। এনে জানায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। পরে ২ হাজার নিয়ে তাদের মিটার দিয়ে দেওয়া হয়। এধরণের ঘটনায় আবাসিক প্রকৌশলী আমির হামজার ওপর মানুষের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলছেন, ‘একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কারণে পুরো উপজেলার মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন’। আমির হামজার অসদাচরণ দিনদিন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। তার দ্বারা বিদ্যুতের সঠিক সেবা মানুষ পাবে না। তাকে এই ষ্টেশন থেকে অব্যাহতিরও দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ অফিস হওয়া উচিত ছিল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দায়িত্বে থাকা আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ প্রমাণ করছে, সেটি সেবা নয় বরং হয়রানি ও দুর্নীতির আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও সচেতন মহলের দাবি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে বিদ্যুৎ অফিসকে প্রকৃত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
মন্তব্য