পাথরঘাটা (বরগুনা)প্রতিনিধি
সুন্দরবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে কেওড়া গাছ ও ফল ।
এই গাছের ফল, যা খেতে সুস্বাদু, রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেমন কেওড়া ফল সাধারণত ডায়রিয়া, আমাশয় এবং পেটের অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি হজমে সাহায্য করে এবং বদহজম ও পেটের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও, কেওড়া ফলে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধ, অদম্য প্রতিক্রিয়া,ত্বকের স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অপরিসীম বিশেষ করে কেওড়া ফল উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যগত আর্থিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এ ফলটি যে কোনো মানুষের স্বাস্থ্যের কয়েকটি দিকে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম, কেওড়া ফলে রয়েছে প্রায় ১২ ভাগ শর্করা, ৪ ভাগ আমিষ, ১.৫ ভাগ ফ্যাট, প্রচুর ভিটামিন বিশেষত ভিটামিন সি এবং এর ডেরিভেটিভসমূহ। কেওড়া ফল পলিফেনল, ফ্লাভানয়েড, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে লিনোলেয়িক এসিডে পরিপূর্ণ। তাই মনে করা হয়, ফলটি শরীর ও মনকে সতেজ রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। চা-এর মত এ ফলটিতে ক্যাটেকিনসহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্যপ্রাণীর খাদ্য হিসেবে কেওড়া ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে কেওড়া ফল ও গাছ হুমকির মুখে।
কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই ফলকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে ফল সংগ্রহের সময় গাছের ডাল কেটে নেয় এ কারণে এই ফলন কমে যাচ্ছে গাছ ও হুমকির মুখে যা পরিবেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
কেওড়া ফল সুন্দরবনের হরিন, বানরসহ অন্যান্য প্রাণীদের আহারে যোগান দেয়। গাছ থেকে এগুলো ছিড়ে মাটিতে পড়ে সেগুলো খায়।
পাথরঘাটা বিষখালিনদীর তীরে হরিণঘাটা ও বলেশ্বর নদীর তীর বিহঙ্গ দ্বীপসহ ছোট ছোট চরে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে কেওড়া গাছ। কেওড়া চারা গাছ প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে না আঁটি থেকে জন্ম নেয়।বরগুনা, পাথরঘাটাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল জলচ্ছাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ঝড় থেকে এই কেওড়া গাছের জন্য বিগত দিনে রক্ষা পেয়েছে। কেওড়া ফল হরিণ ও বানরের প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও সুন্দরবনের জলাশয়ের বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী, মাছেও কেওড়া ফল খেয়ে থাকে।
ওই কেওড়া গাছের উপরে নজর পড়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের। লোক চক্ষুর আড়ালে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র মিলে কাটছে কেওড়া গাছ, চুরি হচ্ছে কেওড়া ফল। পাশাপাশি বনের উল্লেখযোগ্য সুন্দরী গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে । বন এভাবে ধ্বংস করলে এক সময়ে বেড়িবাধ হুমকির মুখে পড়বে আর তখন উপকূলীয় রক্ষা করা ও কঠিন হয়ে যাবে।
উপকূলের বনাঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায় বনের স্বার্থে লোকবল বৃদ্ধিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি করছি
এদিকে হরিণঘাটা ফরেস্ট কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিকদার জানান, আমাদের বন বিভাগে যে পরিমাণ জনশক্তি রয়েছে সেইসব অল্প জনশক্তি দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও বন রক্ষা করতে আমরা দিনরাত কায়িক পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন রক্ষায় যতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সবগুলোই নেওয়া হবে। হরিণঘাটা সুন্দর বন কে সাজাতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, সাথে বন রক্ষায় জনশক্তির চাহিদা চেয়ে সুপারিশ করা হবে।
মন্তব্য