রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
 

০৯ টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চরমপন্থী দলের সদস্য’কে গ্রেফতার

জাহাঙ্গীর আলম পলক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪

ছবি - যুগের কণ্ঠস্বর

রিপোর্ট- জাহাঙ্গীর আলম পলক,

ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন খাগান এলাকা হতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, ডাকাতি ও অন্যান্য সর্বমোট ০৯ টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চরমপন্থী দলের সদস্য খায়রুল ইসলাম গাইন (৩৫)’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

২৫ মার্চ র‍্যাব এর আভিযানিক দল ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন খাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, ডাকাতি ও অন্যান্য সর্বমোট ০৯ টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চরমপন্থী দলের সদস্য ১। মোঃ খায়রুল ইসলাম গাইন (৩৫) কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব-৩ এর সদর দপ্তর থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে

সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) মোঃ শামীম হোসেন এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ড থানা ও শৈলকুপা থানা, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র আইন, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।

২০১১ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অন্তর্গত পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজা (৪০)’কে ট্যাটা দিয়ে গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের কারণ ছিল পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের ৪২ বিঘা সরকারী খাস জমির দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। ২০১২ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার চাঞ্চল্যকর বিপুল আরেকটি হত্যা মামলার দায়ে সে অভিযুক্ত হয়।

পরে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। উভয় মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সে ২১ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১২ সালের অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে ১৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ড থানায় তার নামে একটি অপহরণ মামলা দায়ের হয়।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হরিণাকুন্ড থানাধীন বাগচোয়া লক্ষীপুর গ্রামের জনৈক মিন্টু মালতের ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। এছাড়াও ২০১৬ সালে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বিজয় কুমার দাসের ছেলেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।

সবশেষ ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা হয়। অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ডাকাতির প্রস্তুতি কালে হাতেনাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ১৯ মাস জেল খেটে ২০১৯ সালে জামিনে মুক্ত হয়। ২০২০ সালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত উক্ত মামলায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাধীন পশ্চিম আব্দালপুরে কুখ্যাত চরমপন্থী কালু মিয়া সম্পর্কে তার চাচা হয়। ২০০৯ সালে চরমপন্থী কালুর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সদর থানাধীন এলাকায় চাঞ্চল্যকর দেহ থেকে মাথা কেটে তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন চরমপন্থী কালুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিল। ২০১০ সাল থেকেই কালুর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। হত্যাকান্ডের পর সে আরও কালুর নিকটে চলে যায়। ২০১৭ সালে গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত যখনই সে জেলের বাইরে থাকতো তখনই সে কালুর সহচর হিসেবে দুষ্কর্মে সহযোগিতা করে আসছিলো। সে কালুর সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ে অংশগ্রহণ করতো। সে পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চরমপন্থী সদস্যদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতো।

গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৯ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন খাগান এলাকায় এসে আত্মগোপন করে। সেখানে সে নিজের প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনাম ও পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি স্বনামধন্য এগ্রো প্রতিষ্ঠানে গরুর ফার্মে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে আর কখনো কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামে ফেরত যায়নি। সে স্ত্রীসহ দুই ছেলেকে নিয়ে খাগান এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।

গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন নিরক্ষর। উল্লেখ্য যে, আট বছর বয়সে তার বাবা পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত জবেদ আলী ১৯৯৬ সালে গ্রামের দুই পক্ষের কোন্দলে ট্যাটার আঘাতে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়। সে ছোটবেলা হতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো এবং চাচাদের সহযোগিতায় বেড়ে উঠে। ২০১৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২০১৫/১৬ সালে সে গ্রামে কাঁচামালের ব্যবসা করতো।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে ।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon