নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর দরবার শরীফের পীর পরিচয়ে পরিচিত এনামুল হক লিটনকে ঘিরে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে ‘চিরকুমার পীর’ দাবি করা এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় আড়ালে নারী সাধনা, মাদকসেবন, জমি দখল ও সশস্ত্র অনুসারী বাহিনী গড়ে তোলার মাধ্যমে এলাকায় একপ্রকার স্বঘোষিত রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তিনস্তরের ‘গোপন আস্তানা’
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, চান্দপুর দরবার শরীফে ‘লিটনের খানকা’ নামে পরিচিত স্থাপনাটিতে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। বাইরের স্তরে থাকে অনুসারীদের আনাগোনা, মাঝের স্তরে সিসিটিভি ও পাহারা, আর তৃতীয় স্তর—সবচেয়ে গোপন ঘর—যেখানে ‘নারী সাধনার’ নামে চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
সেই কক্ষে রয়েছে আরামদায়ক খাট, ব্যক্তিগত বাথরুমসহ এমন আয়োজন, যা আধ্যাত্মিকতার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত ভোগের ঘাঁটি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কেউ দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করলেই সিগন্যাল পেয়ে নারীসংশ্লিষ্টদের গোপন দরজা দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানা গেছে।
নারী ভক্ত, না প্রতারণার শিকার?
‘চিরকুমার শাহ সাহেব’ পরিচয়ে এনামুল হক লিটন প্রচার করেন, তিনি কখনো বিয়ে করেননি এবং নারীর মাধ্যমে ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ লাভ করেন। অনুসারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। অভিযোগ উঠেছে, এই নারীদের ‘আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ’ বা ‘সাধনার’ নামে এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক ফাঁদে ফেলা হয়।
একাধিক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করে বলেন, খানকায় নিয়মিত মাদক সেবন, নারীসংশ্লিষ্ট অনৈতিক কাজ চলে; কিন্তু প্রভাব, ভয়ভীতি ও লজ্জার কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেন না।
সম্পত্তি দখল ও ‘রাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ
শুধু নারী কেলেঙ্কারি নয়, পীর নামধারী লিটনের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি জবরদখলেরও অভিযোগ রয়েছে। নিজ ভাইদের জমিও জালিয়াতি করে দখল নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি।
স্থানীয়দের ভাষায়, লিটনের ‘সশস্ত্র অনুসারী বাহিনী’ তার জন্য কাজ করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ভয় দেখানো হয়। এমনকি, তাকে থামাতে গিয়ে পরিবারেই ফাটল দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ
চাঞ্চল্যকর অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউএনও, থানা পুলিশ সবাই জানলেও কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানান, “সবাই জানে, অভিযোগও আছে, কিন্তু কাজ হয় না। ওপরে কারা যেন আছেন, যারা সব চাপা দেয়।”
সমাজে অস্থিরতা ও তরুণদের বিভ্রান্তি
চান্দপুর এলাকার একাংশ বলছেন, এই পীর নামধারী ব্যক্তি ধর্মীয় আবরণের আড়ালে যা করছেন, তা তরুণ প্রজন্মের ধর্মীয় চেতনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তাদের আশঙ্কা—এই ধরনের ধর্মব্যবসা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে বৃহৎ সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
প্রশাসনের বক্তব্য অনুপস্থিত
এনামুল হক লিটনের বিরুদ্ধে এসব গুরুতর অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য