শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
 

প্রশাসনের অগোচরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি নেতাদের অবৈধ গরুর হাট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫

---
বিশেষ প্রতিনিধি

সিলেটে চিনি চোরাচালানের মতো ‘চালান রশিদ’ দিয়ে গরু চোরাচালান যেন বৈধ হয়ে গেছে! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা চিনি চোরাচালানের মতো জড়িয়ে পড়ছেন গরু চোরাচালান পাচারে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্তঘেষা উপজেলার বৈধ বাজারের গরুর ‘চালান রশিদ’। এই রশিদেই সিলেট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা হচ্ছে ভারতীয় গরু এবং মহিষের চালান। গরুর চালান পাচারের এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় আওয়ামী সরকারের আমলে।

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৫ই আগস্টে আওয়ামী সরকার পালানোর পর এবার সেই গরুর চালান পাচারের এই প্রক্রিয়াটি হাতে নিয়েছে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ! শুধু তাই নয়, পবিত্র ঈদুল আজহা’র অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারার রশিদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরুর চালান পাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়টি জানে না স্থানীয় প্রশাসন! তারা বলছেন, ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মিলেমিশে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ!

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে চলতি বছরের ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহত্তর উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন বাসীর কোরবানির পশু বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় ছড়ার বাজার এলাকায় উপজেলা প্রশাসন একটি অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়েছিলেন। এই অস্থায়ী পশুর হাটকে উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্থায়ী হাট প্রচার করে গত প্রায় ২ মাস থেকে অবাদে পশু ক্রয় বিক্রয় করে যাচ্ছেন। এই হাটের চালান রশিদ দিয়েই বর্তমানে ভারতীয় গরু এবং মহিষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, এই হাটি বর্তমানে অবৈধ। তবে এলাকার কেউই প্রতিবাদ করছে না উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের মামলা-হামলার ভয়ে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন এই হাটটি তার নামে ইজারা নিয়ে ছিলেন। নিজাম উদ্দিনের যোগসাযোগে ঈদুল আজহা’র সময় থেকে মিলেমিশে পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফখরুল আলম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি বাদশা, উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ভাই আওয়ামী দোসর ফিরুজ মিয়া এই অবৈধ হাটে জড়িত। তারা দাপটের সাথে চালান রশিদ মাধ্যমে গরু এবং মহিষ বিক্রি করছেন। এই হাটের পশু বিক্রির একটি অংশ সবাই পান। গেলো দেড় মাসে কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে আসা প্রায় কয়েক হাজার ভারতীয় গরু এবং মহিষ এই হাটের চালান রশিদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়েছে।

বিষয়টি জানতে এসব উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের মুঠোফোনে কল করলে কারো নাম্বার বন্ধ, কারো নাম্বার ব্যস্ত দেখায়। তবে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি কল রিসিভ করে জানান, এই হাটটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে পবিত্র ঈদুল আজহা’র অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট হিসেবে চলতি বছরের ৭ জুন তিনি ইজারা নিয়েছেন। গত প্রায় ২ মাস থেকে অবাদে পশু ক্রয় বিক্রয় করে যাচ্ছেন কেনো? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, গত মঙ্গলবার থেকে এই হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি বাজারের সবাইকে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ছড়ার বাজার এলাকায় অবৈধ হাটে গরু বিক্রির রশিদ প্রদান কারি হাটের ম্যানেজার (কোম্পানীগঞ্জি হুজুর) মৌলানা শায়েখ আব্দুল আমিন রাজু ও মানিক জানান, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফখরুল আলম ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিনের এই হাট। আমরা এখানে কাজ করি। এই হাটটি বৈধ না অবৈধ এমন প্রশ্নে তারা জানান, তারা এই বিষয়টি জানেন না। ফখরুল আলম ও নিজাম উদ্দিন তাদের বসিয়েছেন। তারাই জানেন।

অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা রশিদ দিয়ে প্রায় ২ মাস থেকে অবাদে পশু বিক্রয় করা হচ্ছে এই হাটে, এ ঘটনাটি জানেন না কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার এবং কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon