আশিকুর রহমান, জবি প্রতিনিধি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সম্মুখ সারির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা দিয়েছে শাখা কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচে আয়োজিত হয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলে বাগছাসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসীর, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম,এনসিপির পরিবেশ ও জলবায়ু সেলের সদস্য আহসানুল মোহাম্মদ জুবায়ের। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জবি শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আমার খুব মনে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিরাট বিরাট মিছিল বের হত, যেখানে সামনে নারীরা থাকত আর পেছনে ছেলেরা ঢাল হয়ে থাকত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেন বারবার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হবে এবং তারপরও কেন শুধু বারবার আমাদেরই প্রস্তুত থাকতে হবে দেশের যদি ক্রান্তিলগ্ন আসে তাহলে আবার শহীদ হতে। এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে ছাত্রদের রক্তের, ত্যাগের উপর। কিন্তু তারা ছাত্রদের কাছে আসে না, ছাত্রদের কথা শুনে না, যেই চেতনা যেই ভালোবাসা যেই দেশপ্রেম নিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল তার ছিটেফোটাও তারা অনুভব করতে পারেনা। এর বাইরেও আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ এতো দূর্ঘটনার কথা জেনেও আপনারা দেশের জন্য রাজপথে ছিলেন, আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসীর বলেন, ‘কেন আমাদের ন্যায্য অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার আন্দোলন করতে হবে? কেন আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে পারছি না? আমাদের নিরাপত্তার জন্য এই জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র লাগবে। এ কথা আমি স্পষ্ট করে আগেও বলেছি, এখনও বলছি- বিপ্লবীদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় না বরং নিরাপত্তা প্রয়োজন রাষ্ট্রের। তাই জুলাই সনদের প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা শুনেছি ২০০১ থেকে ২০০৭ সালে বগুড়াতে আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হলেই চাকরি পাওয়া যেত। আমরা সে সব কিছু আর ফেরত চাই না। পিএসসি সংস্কারে বাধা দিলে আবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের আন্দোলন জগন্নাথের ১৫ জুলাইয়ের বড় মিছিল ছাড়া অসম্ভব ছিল। মিছিল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ওইদিন যখন এল তখনি আমরা আরও বেশি সুসংবদ্ধ হয়েছিলাম।’
আয়োজন নিয়ে বাগছাস জবি শাখার মুখপাত্র ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব ছিল আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের গৌরবময় অধ্যায়। দল-মত ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। গড়ে উঠেছিল ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার শক্তিশালী বন্ধন। আজকের এই কর্মসূচি সেই ঐক্য ও চেতনার ধারাবাহিকতা। আমরা বিশ্বাস করি আন্দোলনের প্রকৃত শক্তি আসে ঐক্য থেকে, যা আমাদের এগিয়ে নেবে অধিকার আদায়ের পথে।’
সেক্রেটারি মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমরা যেহেতু জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র সংগঠন তাই জুলাই আহত এবং যারা সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সাহসী সাংবাদিকতা করেছেন, তাদের একটা স্বীকৃতি বা সম্মাননা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এটি মূলত ছিল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ একটি সুন্দর দেশ গড়ার বার্তা। যেভাবে আমরা গত জুলাই দেশের প্রয়োজনে একত্রিত হয়েছিলাম, সেই তাড়না থেকে আমাদের এই আয়োজন।’
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আন্দোলনের ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সাংবাদিক সংগঠন
সাংবাদিক সমিতি, রিপোটার্স ইউনিটি ও প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও বাংলাদেশের পতাকা উপহার দেয়া হয়।
মন্তব্য