শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
 

পিরোজপুরে এক হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন: ভূমিকম্প আতঙ্কে দিন কাটছে হাজারো মানুষের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫

---
মো. শামীম হোসাইন
পিরোজপুর জেলার পুরাতন ডিসি অফিস, মহিলা কলেজ, জেলা হাসপাতালের মতো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি মিলে এক হাজারের বেশি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে সাধারণ মানুষ —সবাই ভূমিকম্প আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে কয়েক হাজার মানুষ।
‎জানা যায়, পিরোজপুর দেড় শতাধিক বছরের পুরনো একটি মহকুমা, যা ১৯৮৬ সালে জেলায় উন্নীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় জেলার অধিকাংশ সরকারি ভবনই বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পুরাতন ডিসি অফিস ভবনটি বহুবছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখনো সেখানে দুটি সরকারি অফিসসহ বেশিরভাগ কক্ষ ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরের টাউন ক্লাব মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘদিন  ধরে। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনা সরকারি মহিলা কলেজের চারটি ভবনও। এমনকি হাসপাতালের বিভিন্ন অংশেও ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে।
‎শহরের ক্লাব সড়কের গোপাল কৃষ্ণ টাউনক্লাব মার্কেট প্রায় ১০ বছর আগে ভবনের ঝুঁকি এড়াতে উত্তরা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক তাদের শাখা সরিয়ে নিয়েছে, তবে অন্যন্য দাফতরিক কার্যক্রম ও ব্যবসা এখনও চলছে।
‎পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের তিনটি অ্যাকাডেমিক ভবন। যার মধ্যে একটি তিন তলা, একটি চার তলা ও একটি দুই তলা ভবন। এ ছাড়া, কলেজটির রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক হল ভবন। তবে আবাসিক হলটিসহ কলেজের তিনটি ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। উঠে গেছে দেয়ালের রং, খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে। কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ মহিলা কলেজের ১ হাজার ৮ শত জন শিক্ষার্থীর ১ হাজার জনকেই পাঠদান করতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবন দুটিতে। ঝুকিপূর্ণ আবাসিক হলে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে প্রতিদিনই আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন।
‎এ ছাড়া, পিরোজপুর জেলায় ৯৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৫টি ভবনই রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জরাজীর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। যার ফলে তাদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক।
‎পিরোজপুরের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন মাইনুল আহসান মুন্না। যার অফিস পুরাতন ডিসি অফিস ভবনে। তিনি বলেন, পুরাতন ডিসি অফিস ভবন বলে পরিচিত ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এখানে সরকারি অফিস রয়েছে, পাশাপাশি সামাজিক সংস্থাগুলো ভাড়া নিয়ে থাকছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। ভূমিকম্পের পর থেকে আমরা বেশি আতঙ্কে রয়েছি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থার দাবি জানাই।
‎শহরের ক্লাব সড়কের গোপাল কৃষ্ণ টাউনক্লাব মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় একটি অফিসে বসেন নিয়াজ মোর্শেদ। তিনি বলেন, এই ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ, আমরা ঝুঁকি নিয়েই এখানে কাজ করছি। ভবনটি সংস্কারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
‎পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার বলেন, আমাদের কলেজের তিনটি অ্যাকাডেমিক ভবন ও একটি হোস্টেল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্পের পরে হোস্টেলে ফাটল ধরেছে, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকছি। আমরা চাই, দ্রুতই হোস্টেলটির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ হোক।
‎গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) ফাহিম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ভবনগুলো কনডেমনেশন (পরিত্যক্ত ঘোষণা) করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।
‎এ বিষয়ে পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে পুরাতন কালেক্টরের ভবনসহ অনেক বিল্ডিং রয়েছে, এগুলো আমরা চেক করব। পুরাতন কালেক্টরেট ভবনটি মূলত স্যালভেজ (পুনরায় ব্যবহার) হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখানে একটি স্কুল রয়েছে, সেখানে আমরা একটি ভবন প্রস্তাব করেছি। তবে যেগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেগুলো কনডেম (পরিত্যক্ত ঘোষণা) করতে হবে।
‎শুক্রবারের ভূমিকম্পের খবরে এসব ভবনে কাজ করা কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আশঙ্কা নিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon