![]()
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে ঝালকাঠি এবং পার্শ্ববর্তী কাউখালী অধিক সুপরিচিত। সুপারিকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে সুপারির বানিজ্যিক বাজার। শুকনো সুপারি বিক্রি হয় ফাল্গুন থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এবং পাকা সুপারি বিক্রি হয় শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। স্থানীয়রা সুপারি কিনে পাইকারদের মাধ্যমে ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সহ মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি করে।
গ্রাম-গঞ্জের অতিথির আপ্যায়নে কিংবা বিবাহ অনুষ্ঠানে যুগযুগ ধরে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িত পান- সুপারি। এখন এই ঐতিহ্যবাহী অর্থকরি ফল সুপারি শুধু সংস্কৃতি নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিরও শক্ত ভিত্তি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঝালকাঠি, পিরোজপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে দেখামিলে অসংখ্য সুপারি গাছ এবং সুপারির বাগান।
ঝালকাঠি জেলার চারটি উপজেলার ৪৭১ টি গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে আছে সুপারি গাছ। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৭৫১ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। গতকয়েক বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলন অনেক ভালে হয়েছে। নদী বেষ্টিত এ অঞ্চলে পলিমাটির কারনে মাটির উর্বতাবৃদ্ধি পাওয়ায় ফলন ভালো হয়। সুপারির আকার অনুযায়ী প্রতি কুড়ি পাকা সুপারি (২১০ টি) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।হাটের দিন নির্দিষ্ট স্থানে পাইকার ও কৃষকদের উপচে পড়া ভীর থাকে। জেলার চার উপজেলার বাজার এবং ৮৯ টি সাপ্তাহিক হাটে ৫- ৬ কোটি টাকার সুপারি কেনা - বেচা হয়। রাজাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী কাউখালীর সাপ্তাহিক হাটেও কোটি টাকার সুপারি বেচা - কেনা হয়।
কৃষকরা জানান - একবার গাছ লাগালে ৪-৫ বছরের মধ্যে সুপারিফল দিতে শুরু করে এবং টানা ৪০/৫০ বছর ফলদেয়।এগাছের খুববেশী পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনদিন সুপারি চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। কাঁচা পাকা সুপারি শুকিয়ে, বাকল ছারিয়ে শুকিয়ে কিংবা বস্তাবন্দি করে বদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়।
শুকনা সুপারি বিক্রি হয় কেজি হিসেবে আর কাঁচা পাকা সুপারি বিক্রি হয় ঘা হিসেবে পরিমাপ করে। প্রতি ১০ টি সুপারিতে একঘা, আর ২১ ঘা মানে এককুড়ি অর্থাৎ সংখ্যা হিসেবে ২১০ টি সুপারি তে হয় এককুড়ি। এছাড়াও সুপারির শুকনো ছোলা জ্বালানি হিসেবে এবং সুপারির খোলদিয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়ান টাইম থালা, প্রিচ, ট্রে সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার গিয়াসউদ্দিন জানান ঝালকাঠির - কাউখালীর সুপারির মান অন্য এলাকার চেয়ে অনেক ভালো। বড় সাইজের সুপারি বিদেশে রফতানি করি এবং বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাই।
কাউখালীর সুপারির আড়ৎদার অসীম কন্ডু , রাজন ট্রেডার্স এর মালিক কবির হোসেন জানান, আমরা পাইকাররদের কাছথেকে কিনে ভারত, মায়ানমার রফতানি করি। এ অঞ্চলের সুপারির মান ভালো বিধায় এর কদর এবং চাহিদাও বেশী।
এই মৌসুমে জেলার বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে সুপারিকে ঘিরে। স্থানীয় ভাবে বিক্রি হওয়ায় সুপারির মাধ্যমে কৃষক, পাইকার, ব্যাবসায়ী, শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক সহ সবাই অর্থ নৈতিক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান আমরা চাই সুপারি শুধুই কৃষিপণ্য নয় বরং একটি রফতানিযোগ্য ব্রান্ডে পরিনত হোক। কৃষকদের আমরা পরিকল্পিত ভাবে চাষে উৎসাহিত করছি যেনো এ ফল আরও রফতানি যোগ্য হয়। এটি এখন সম্ভাবনাময় এক কৃষি শিল্পে পরিনত হয়েছে।



মন্তব্য