খাদেমুল ইসলাম ফরহাদ, ইবি:
সম্প্রতি ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট উক্তি ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ সম্পর্কিত একটি ১২ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওতে জুলাইকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থানের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। তবে ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষের ১২ সেকেন্ড কেটে অনলাইনে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি অভিযুক্তদের।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় সংবাদ সম্মেলনে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দেন অভিযুক্তরা, অভিযুক্তরা হলেন সমাজ কল্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহান, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, ইইই বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মোজাম্মেল হক ও অর্থনীতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের নাঈমুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে ওমর ফারুক বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায় আমরা নিজেদের বন্ধুদের মাঝে প্রচারণা নিয়ে নিজেদের রুমে মজার ছলে আলোচনা করছিলাম। এতে সাদিক কায়েম ভাই এবং আবেদুল ভাই উভয়কেই নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার একপর্যায়ে ডাকসু নির্বাচনের সময় সাদিক কায়েম ভাইকে নিয়ে ব্যবহৃত বাক্য ‘তুমিও জানো, আমিও জানি, সাদিক কায়েম পাকিস্তানি’ এবং ডাকসু প্রচারণায় ব্যবহৃত আবিদ ভাইয়ের বাক্য ‘প্লিজ, আপনারা কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ বলা হয়। আমাদের কথা চলাকালীন আমাদের মধ্য থেকেই একজন মজার ছলে ভিডিও ধারণ করে এবং ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বে অনলাইনে প্রকাশ করে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাই, ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষের ১২ সেকেন্ড কেটে অনলাইনে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে এবং আমাদের জুলাইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ এটি নিয়ে ভিডিও তৈরি করা এবং জুলাইয়ে আবিদ ভাইয়ের কৃতিত্বকে হেয় করা বা জুলাই আন্দোলনের স্লোগানকে অবজ্ঞা করা আমাদের কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না। বরং আমরা ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণাকালীন কিছু বক্তব্য নিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলাম।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছি। আর আবিদ ভাইয়ের জুলাইয়ের অবদান এবং তার আর্তনাদ ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ সেই কঠিন মুহূর্তে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও আন্দোলনে প্রাণ সঞ্চার করেছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটি প্রকাশ না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিওর কিছু অংশ প্রকাশ করাই বিভ্রান্তির মূল কারণ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তরা বলেন, আমাদের জুলাই-আগস্টের অনুভূতিকে আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। এছাড়াও আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছি। আর আবিদ ভাইয়ের জুলাইয়ের অবদান এবং তার আর্তনাদ ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না সেই কঠিন মুহূর্তে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও আন্দোলনে প্রাণ সঞ্চার করেছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা ডাকসু সংশ্লিষ্ট আলোচনা আর ইনফরমাল কথাবার্তা করছিলাম বন্ধুদের মাঝে কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় ভিডিওর খণ্ডংশ ১২ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ ও ভাইরাল হয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থী দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করে যার কারণে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী ও শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে নয় পুরো দেশব্যাপী যাদের মনে এই খন্ডাংশ ভিডিও ব্যাথিত করেছে তাদের কাছেও আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
প্রসঙ্গত, ডাকসুর ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলনে বলা ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ অংশটি নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ উঠে এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দেন তারা।
ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ৮ জন শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলামের ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ এবং ‘আপনাদের ভাই ছেড়ে যাওয়ার মানুষ না’ উক্তিকে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপন করা হয়। তারা সবাই ইবি শাখা ছাত্র শিবিরের হল ও ফ্যাকাল্টির কর্মীর বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট উক্তি ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থানের ১২ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর পরই এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে পুরো ভিডিও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে ‘তুমিও জানো, আমিও জানি, সাদিক কাইয়ুম পাকিস্তানি’ এই স্লোগানও দেওয়া হয়।
মন্তব্য