মোঃআমিনুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শান্তিপূর্ণ গ্রাম সুন্দাইলপাড়া হঠাৎ করেই এক নির্মম ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। গ্রামবাসী চোখের সামনে হারাল এক চাষির বছরের পরিশ্রম, স্বপ্ন আর জীবিকার প্রধান অবলম্বন—সবটাই মাত্র কিছু মূহূর্তের মধ্যে বিষে নিঃশেষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মৃত মোঃ তারা মিয়ার ছেলে মোঃ নাজমুল জীবনের সব সঞ্চয় ও শ্রম দিয়ে একটি পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন। মাছগুলো বড় হতে হতে যখন বাজারজাত করার সময় ঘনিয়ে এসেছে, তখনি ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। রাতে কে বা কারা পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মাছ মেরে ফেলে।
ঘটনার পরপরই এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মূল অপরাধী সাহিন-কে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাহিন অকপটে স্বীকার করেন, তিনি নিজ হাতে পুকুরে বিষ দিয়েছেন। তার এই জঘন্য কাজে তাকে প্ররোচিত করেছে মোঃ ফারুক (৩৮), পিতা আক্কাস, যিনি ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে সাহিনকে বিষ কিনে দেন এবং এই অপরাধ সংঘটিত করতে সহায়তা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে সাহিন ঘটনাটির সম্পূর্ণ বিবরণ স্বীকার করে বলেন, “নাজমুলের সাথে ফারুকের শত্রুতা ছিল। সেই শত্রুতার জেরেই ফারুক আমাকে বিষ কিনে দেয়, আর আমি তা পুকুরে ফেলে দেই। আমি জানি এটা অপরাধ, কিন্তু শত্রুতার আগুনে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।”
এ বিষয়ে ফারুকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে ফারুক শত্রুতার কথা স্বীকার করে কিন্তু বিষ কিনে দেয় শাহীনকে এ কথা অস্বীকার করে।
ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনাব সুরুজ মিয়া বলেন, “এটা শুধু নাজমুলের ক্ষতি নয়, এটা পুরো গ্রামের জন্য লজ্জার। আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
ঘটনাটি যেন আর কারো জীবনে না ঘটে, সেজন্য এলাকাবাসী সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। নাজমুল বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন, তার স্বপ্ন যেন বিষে ঝলসে গেছে।
একটি নিরীহ চাষির চোখের জল, একটি পরিবারের জীবন-সংগ্রাম, আর সমাজের বিবেক—সব মিলিয়ে এই ঘটনা আমাদের চোখে জল আনে, প্রশ্ন তোলে—শত্রুতা কতটা গভীর হলে একজন মানুষ এভাবে আরেকজনের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে?
মন্তব্য