সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
 

চতুর্থ বর্ষে তিনবার পরীক্ষা দিয়েও স্নাতকের গন্ডি পেরুতে পারেননি ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

---
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় তিনবার স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের পরিক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাবেক সভাপতি। আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ জাকসুর ভিপি প্রার্থী হলেও ছাত্রত্ব না থাকায় তার প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তার প্রার্থীতা বৈধ বলে দাবি করেছেন প্যানেলের প্রার্থীরা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন অমর্ত্য রায়ের নেতৃত্বাধীন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল।

এর আগে গত শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) জাকসু নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্যর প্রার্থীতা বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জনকে জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তার নাম ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হলো।

জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার বলে বিবেচিত হবেন এবং শিক্ষার্থী সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্তাবলি হচ্ছে, যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪+২) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১+১) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সে সকল শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের ৮ ধারায় উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যেকোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট প্রদান করতে পারবে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলন অমর্ত্যের নেতৃত্বাধীন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত। প্রথমে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় এবং পরে চূড়ান্ত ভোটার ও প্রার্থী তালিকায়ও অমর্ত্য রায় জনের নাম ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে। নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ জাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার একটি ষড়যন্ত্র।

তারা আরও দাবি করেন, ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে অমর্ত্য রায়কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে একই বছরের ২১ মার্চ হাইকোর্ট তাকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু ক্লাস, ল্যাব পরীক্ষা ও হলে থাকার অনুমতি দেয়নি। বহিষ্কারাদেশ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল ছিল। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অমর্ত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর মাঝে পরীক্ষা শুরু হলেও ক্লাস করতে না পারায় তিনি চতুর্থ বর্ষের ৪০৮ নং কোর্সের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অমর্ত্য রায় জনকে বিশেষ বিবেচনায় স্নাতকের ৪০৮নং কোর্সে পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেষবার অকৃতকার্য হওয়ার পূর্বে আরও দুইবার অমর্ত্য উক্ত কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে বারবার অকৃতকার্য হওয়ায় তার নিয়মিত ছাত্রত্ব সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদিত একটি নথি এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে।

নথি থেকে জানা যায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ২০২১ সনের ৪র্থ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪০৭ ও ৪০৮ নং কোর্সে অকৃতকার্য হন। পরবর্তীতে ২০২২ সনের ৪র্থ পর্বের উক্ত দুটি কোর্সে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উভয় পরীক্ষায় পুনরায় অকৃতকার্য হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সনের ৪র্থ বর্ষের ব্যাচের সাথে ৪০৭ ও ৪০৮ নং কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪০৮ নং কোর্সে অকৃতকার্য হন। পরে তিনি ৪০৮ নং কোর্সে বিশেষ পরীক্ষার সুযোগ প্রার্থনা করে আবেদন করেন। পাশাপাশি সর্বশেষ স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন।
নথি থেকে আরও জানা যায়, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল অমর্ত্য রায় জনের ২০২৩ সনের ৪র্থ পর্বের ৪০৭ ও ৪০৮ নং কোর্সের সম্পন্নকৃত মানোন্নয়ন পরীক্ষাকে বিশেষ পরীক্ষা হিসেবে অনুমোদন এবং ৪০৮ নং কোর্সে বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করে। একই সাথে উক্ত পরীক্ষায় পাশ করা সাপেক্ষে এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের শর্তে তাকে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির অনুমতিদানের সুপারিশ করে।

প্রসঙ্গত, একাডেমিক কাউন্সিল হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান একাডেমিক সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি ও অধ্যাদেশের বিধানাবলী অনুযায়ী এই কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষা ও পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি, সংবিধি দ্বারা প্রদত্ত বা আরোপিত অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্বও এটি পালন করবে। সকল একাডেমিক বিষয়ে সিন্ডিকেটকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার একাডেমিক কাউন্সিলের থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়েল ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর বা একাধিক থাকলে সকল প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, অনুষদের ডিনগণ, অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধানগণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য।

নিয়মিত শিক্ষার্থী না হলেও তিনি কিভাবে প্রার্থীতার ফরম নিয়েছেন জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় বলেন, এখন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। এটা আইনী বিষয়। আইনের মাধ্যমেই সমাধান হবে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে যে অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু সংবিধান অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon