সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
 

জীবনের পথচলা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫

---

জাকির হোসেন

ছোট একটি গ্রামে জন্ম হয় আমার। সেখানে খোলা মাঠ, পাখির ডাক, মাটির গন্ধ—সবকিছুই ছিল সহজ, সরল আর নিস্তরঙ্গ। সেই গ্রামীণ পরিবেশেই আমি হাতেখড়ি নিয়েছিলাম মায়ের হাতে কাঠির মাথায় কালি আর তালের পাতায়। তারপর মাটির পেন্সিলের মাটির সিলেটে লেখা শুরু করেছিলেম, অ আ ই / ক খ গ।

বাড়ির অদুরেই  সরকারি প্রাইমারি স্কুল যার নাম চামটা  প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়।

 

  আংশিক বাঁশের বেড়ার ক্লাসরুম, টিনে চাল, কাঠের কালো বোর্ড আর হাতে খড়ি দেওয়া একটা সাদা খাতা—এভাবেই শুরু আমার শিক্ষাজীবন।

বৃহত্তর বরিশাল জেলা, বাকেরগঞ্জ- থানাধীন, চামটা গ্রাম,নিয়ামতি ইউনিয়নের অজপাড়া গায়ের এক বালকের জীবন কাহিনী।

 

গরিব মাজারী পরিবারের শৈশব ছিল সংগ্রামের, কিন্তু স্বপ্নময়। কাঁদা মাটি আর ধানক্ষেতের মাঝে খেলাধুলা, আবার বইয়ের পাতায় ঘাম ঝরিয়ে পড়া। ছোট্ট মন তখনো বুঝত না জীবনের কঠিন পথগুলো কতটা বন্ধুর হতে পারে। কিন্তু দিন বদলাতে থাকে।

 

এক সময় জীবনের চাহিদা ও বাস্তবতার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাই।

ঢাকা মিরপুর ১১ নম্বরে  দূর সম্পর্কের  আত্মীয়র বাসায় থাকি খাই, এবং কর্মজীবন শুরু। ঢাকা শহরের কোলাহল, ভিন্ন রকম জীবনযাত্রা, কংক্রিটের ইমারত আর অচেনা মুখের ভীড়ে নিজেকে খুঁজে পেতে শুরু করি।

পদে পদে  শুরু হয় জীবনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয়  অধ্যায়—কখনও  দোকানের সেলসম্যান,শ্রমজীবী, কখনও সহকারী, আবার কখনও নাট্যকর্মী নাট্য অভিনেতা, একক অভিনয় থেকে শুরু করে, আবৃত্তি গান সহ সংবাদপত্রে লেখা পাঠানো—সবই ছিল শেখার আর টিকে থাকার লড়াই।বাংলাদেশ রেডিওর কন্ঠডিশনে ফেরত আসতে হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে সাংবাদিকতার উপরে  নিমকোর একটি ট্রেনিংও পেয়েছিলাম, উপ-পরিচালক ছিলেন জনাব রুহুল আমিন সাহেব নামটি আজও মনে পড়ে। তখনকার আমলে বাংলাদেশ বেতারের রিজনাল ডাইরেক্টর ছিলেন এম এ আব্দুল জলিল, এ আরডি ছিলেন আব্দুল হাকিম হাওলাদার।বাংলাদেশ চলচ্চিত্র টেলিভিশন রেডিও সহ অসংখ্য কিছু গুনি ব্যক্তিবর্গের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।

 

জীবনের বাস্তবতা আমাকে শিখিয়েছে কথা বলা নয়, কাজ দেখাতে হয়। একসময় শহরের মিডিয়াপাড়ায় ছোট্ট পা রাখি। বাংলাদেশ বেতারে সুযোগ পাই নি  প্রোগ্রামে কণ্ঠ দেওয়ার, কখনও আবৃত্তি, কখনও ছোট নাটকের সংলাপ। পান্ডুলিপি জমা দেওয়া নিয়ে কোন এক গীতিকারের সাথে তুল কান্ড হয়েছিল।  জীবনের তাগিদে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল।  এই সূত্রেই খুলে যায় নতুন দরজা।

বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেট পত্রিকা দিয়ে লেখালেখির হাতে খড়ি, ১৯৯৯/২০০০ ইংরেজি। পরবর্তী আরো কিছু পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলাম, পরবর্তীতে আমি যুক্ত হই ‘দৈনিক আলোর জগৎ’ পত্রিকায়।

আলোর জগৎ পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক মৃত ফারুক আলম তালুকদার সাহেব সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে রেখে দিলেন। কিন্তু মাঝে মাঝে সম্পাদকীয় কলমে লেখা দিতাম ছাপা হতো দীর্ঘকাল। সেখান থেকে শুরু হয় আমার প্রকৃত সাংবাদিকজীবন। আমি লিখেছি—মানুষের কথা, সমাজের কথা, বঞ্চিতের কথা। আমার কলমের মধ্য দিয়ে সমাজের সত্য তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। শুধু সংবাদ নয়, আমি লিখেছি কবিতা, ছড়া, গান—মনে কথা জমে গেলে ছন্দে ঢেলে দিতাম।

 

মঞ্চে পরিচালনা করেছি, নাটক লেখেছি সিনেমার কাহিনী লিখেছি , বৈশাখী ফিল্মে পরিচাল জনাব মোঃ সত্তার সাহেবের কাছে কাহিনী জমাও দিয়েছিলাম। সিনেমা জগতের এহতে শাম, এম এ জামান, ঝন্টু ভাই সহ অসংখ্য গুনিজনের ছোঁয়া পেয়েছিলাম। গেয়েছি নিজস্ব সুরে লেখা গান, লিখেছি অন্তরা, ছন্দকলি, হৃদয় নিংড়ানো আবৃত্তির পাণ্ডুলিপি। কখনও শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান, কখনও দেশের ইতিহাস নিয়ে বিশেষ নাটিকা—সবকিছুতেই ছিল একটাই লক্ষ্য: মানুষকে ছুঁয়ে যাওয়া।

পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তর মঞ্চের পুরস্কার  পেয়েছিলাম, ফ্যামিলি প্লানিংয়ের পরিচালক ছিলেন এম নওয়াব আলী,স্যার,আমাকে অত্যন্ত আদর সোহাগ দিতেন।

প্রাসঙ্গিক  জীবনে অনেক মঞ্চ থেকে পুরস্কার পেয়েছি, আজ এই পঞ্চাশ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে, আমি পেছনে তাকালে দেখি—গ্রামের সেই খুদে ছেলেটা অনেক পথ পেরিয়ে এসেছে। কাঁদা মাটির পাঠশালা থেকে শহরের মিডিয়ামঞ্চে, এক অনির্বাণ আলোয় আমি এখনো লেখি, বলি, গাই… কারণ এটাই আমার পথ, এটাই আমার ভালোবাসা।

 

“জীবনের পথে কঠিন সময় আসে, কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। স্বপ্ন যদি সত্যি করতে চাও, তবে হাঁটতেই হবে—

সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী চলমান গতিতে আল্লাহ তায়ালা যেন সাহায্য করেন আমিন।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon