সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিনিধি:
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকের সামনের দেয়ালে আঁকা ‘জুলাই গ্রাফিতি’ ও লাগানো এইচএসসি পরীক্ষার সিট প্ল্যান ঢেকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ গেটের সামনের দেয়ালে লাগানো ব্যানারে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। কিন্তু ওই ব্যানারটি দিয়েই ঢাকা পড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সিট প্ল্যান ও ইতিহাসসমৃদ্ধ ‘জুলাই গ্রাফিতি’।
পরে সমালোচনার মুখে ব্যানারটি সরিয়ে ফেলা হলেও এ ঘটনায় কলেজজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা। শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল বলছে, স্বাধীন মত প্রকাশ ও আন্দোলনের ইতিহাস বহনকারী গ্রাফিতি ঢেকে দলীয় ব্যানার লাগানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কলেজের বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা হয় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ ভিত্তিক গ্রাফিতি। এসব চিত্রে আন্দোলনের আবেগ, দেশপ্রেম এবং সংহতির প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে, যা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়।
পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জীবন দিয়ে আন্দোলন করেছি। সেই ইতিহাস তুলে ধরতেই এই গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে। এটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। শিবিরের ব্যানার এসব ঢেকে দিয়েছে, এটা আমাদের প্রতি অবমাননার শামিল।”
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “সিট প্ল্যান এবং গ্রাফিতির ওপর ব্যানার লাগানো কোনো ছাত্র সংগঠনের কাজ হতে পারে না। এটা ইতিহাস ও আন্দোলনের প্রতি অশ্রদ্ধা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সদস্য সচিব শামসুদ্দিন বলেন, “এই গ্রাফিতি আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রতীক। তা ঢেকে দেওয়া দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।”
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রাজিব হোসাইন বলেন, “বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত। আমরা জানতাম না এখানে গ্রাফিতি রয়েছে। এটি জানার পরপরই আমরা ব্যানার সরিয়ে নিয়েছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে আসছে।”
এদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, গ্রাফিতির মাঝের ফাঁকা স্থানে সিট প্ল্যান লাগিয়ে কলেজ প্রশাসনও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বইছে সমালোচনার ঝড়।
মন্তব্য