রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
 

দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস উদযাপিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫

 

সুমন গাজী, বাকৃবি--- প্রতিনিধি:


দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ব মেধাস্বত্ব (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি - আইপি) দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।


শনিবার (২৬ এপ্রিল) দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মিউজক অ্যান্ড আইপি, ফিল দ্যা বিট অফ আইপি’।


দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবসের ব্যানারে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন ও দেবদারু সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে এসে শেষ হয়।


 

শোভাযাত্রা শেষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক ও কোষাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির। আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. মাসুম আহমাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।


 


এসময় ইউজিসির স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ডিভিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনির উল্লাহ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাসম্পদ অধিকার (আইপিআর) বিষয়ক বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। এসময় আইপি বিষয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান উল্লেখ করে তিনি জানান, বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিমাণ বাড়লেও মেধাস্বত্ব সুরক্ষার বিষয়ে এখনো সচেতনতা এবং কাঠামোগত প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বা জ্ঞানের সুরক্ষা নেওয়া হয় না, ফলে সেগুলো অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ হারিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেধাস্বত্ব অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি, আইপি সেল গঠন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির অত্যন্ত জরুরি। এই উদ্যোগগুলো শিক্ষার পাশাপাশি উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।


 


সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘১৯৭০ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে দেশের ইতিহাসে এবছর এই প্রথম দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিতে আইপির গুরুত্ব প্রচারে ভূমিকা রাখবে আজকের এই উদযাপন।’


 


ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এবছরের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী সংগীত জগতে মেধাস্বত্বের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। কীভাবে কপিরাইট ও অন্যান্য আইপি অধিকার শিল্পীদের সুরক্ষা দেয় এবং তাদের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করে তার গুরুত্বও তুলে ধরেছে এই প্রতিপাদ্য। নতুন নতুন উদ্ভাবনা যারা করছেন তাদের অধিকার সম্পর্কে সকলে জানাতে হবে। মেধাস্বত্ব যাদের আছে তাদের অধিকারকে সংরক্ষণ করার বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’


 


প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব বলেন, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন। উদ্ভাবনের আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার (প্যাটেন্ট) জন্য আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। সেকারণে ইউজিসি একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করবে যেখানে গবেষকরা তাদের উদ্ভাবিত পণ্যের জাত বা প্রযুক্তি বা অন্যান্য উদ্ভাবনা প্যাটেন্ট (আইনি স্বীকৃতি) করার ক্ষেত্রে আবেদন বিষয়ক বিস্তারিত সহায়তা পাবেন। প্যাটেন্ট করতে চাওয়া উদ্ভাবনা ও গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য ইউজিসির কাছে পাঠালে ইউজিসি তৎক্ষণাৎ সেটির ডাটাবেজ তৈরি করে রাখবে এবং বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে সেটি পাঠিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে টেকনোলজি ট্রান্সফার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস স্থাপনের জন্য ইউজিসি থেকে প্রোপোজাল আহ্বান করা হয়েছে। ইউজিসির একটি কেন্দ্রীয় টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস থাকবে যাতে প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্পের উদ্ভাবনা বা প্রযুক্তিগুলো ইউজিসি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এর জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপি নীতিমালা গঠন করার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon