শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
 

শীতে জমে উঠেছে কাজিপুরের কম্বলপল্লী: ব্যস্ত সময় পার করছে কম্বল শিল্পের কারিগররা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫

---

‎জাহিদ হাসান, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

শীতের আগমনে জমে উঠেছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার শিমুলদাইড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঝুট কম্বল শিল্প। উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের হাজারো কারিগর এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কম্বল তৈরির কাজে। মান ভালো, দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় ‘কাজীপুরের কম্বল’ সারাদেশে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

‎প্রায় দুই যুগ আগে যমুনার ভাঙনে সর্বস্বান্ত কয়েকটি গ্রামের মানুষ তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল বানানোর কাজ শুরু করেন। পরে এই শিল্প ছড়িয়ে পড়ে পাঁচটি ইউনিয়নের ৫০টিরও বেশি গ্রামে। বর্তমানে এ খাতে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার নারী-পুরুষ।

‎শিমুলদাইড় বাজার এখন দেশের অন্যতম বড় কম্বল বাজার হিসেবে পরিচিত। মৌসুমে এখানকার কারিগররা ৮০ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। এতে ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে জানিয়েছেন শিমুলদাইড় কম্বল বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন। ইতোমধ্যে ২০ থেকে ২৫ লাখ কম্বল বিক্রি হয়ে গেছে।

‎কারিগররা জানান, গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা সেলাই করে প্রতিটি কম্বলে ৩০–৪০ টাকা মজুরি পান। অনেকে দিনে ৮–১০টি কম্বল তৈরি করে মাসে ১২–১৫ হাজার টাকা আয় করছেন। এতে পরিবারে বাড়ছে সচ্ছলতা, নারীর ক্ষমতায়নও হচ্ছে দৃশ্যমান।

‎ব্যবসায়ী জিন্নাহ ও করিম জানান, মানভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় সাধারণ কম্বল এবং ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের নতুন কাপড়ের কম্বল পাওয়া যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে এসব কম্বল।

‎অনলাইন ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই। ছালাভরা গ্রামের ফরহাদ রেজা জানান, তিনি ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনে কম্বল বিক্রি শুরু করেছেন। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার অর্ডার পাচ্ছেন। এতে প্রতিদিন তার আয় ১৫–২০ হাজার টাকা। তার উদ্যোগে ৩৫–৪০ জন শ্রমিকের জীবিকা চলছে।

‎কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব মানুষগুলো আজ কম্বল শিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। এই শিল্প এলাকার অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। প্রশাসন সবসময় কম্বল ব্যবসায়ীদের পাশে আছে।”

‎শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজীপুরের কম্বল পল্লীতে বেড়ে চলেছে কর্মচাঞ্চল্য—দিনরাত সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। দেশের মানুষের গরম পোশাকের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে এ শিল্প।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon