সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিনিধি, ঢাকা
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। নামকাওয়াস্তে চালু থাকা মেডিকেল সেন্টারটি বর্তমানে সেবা না দিয়ে শুধুই একটি কাঠামো হিসেবে টিকে আছে। চিকিৎসাসেবা, সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে।
দৈনিক কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকা এই কলেজে শিক্ষার্থীদের হঠাৎ অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল সেন্টার থাকলেও, সেখানে কার্যত নেই কোনো পর্যাপ্ত সেবা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাধারণ জ্বর বা মাথাব্যথার জন্য ব্যবহৃত ‘নাপা’ ট্যাবলেট ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ সেখানে পাওয়া যায় না। জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ নেই, এমনকি ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।
মেডিকেল সেন্টারের ভেতরে একবার ঢুঁ মারলেই চোখে পড়ে দুরবস্থার চিত্র—ভাঙা জানালা, নোংরা পরিবেশ, একমাত্র বেডটি রীতিমতো জরাজীর্ণ, নেই কোনো শীতল পরিবেশ বা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, কেউ অসুস্থ হলে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া মানে যেন দ্বিতীয়বার অসুস্থ করে ফেরা।
একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানায়, অসুস্থ হয়ে মেডিকেল সেন্টারে গেলে প্রায়শই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। আবার কখনও প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ঠিকঠাক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে এক গুরুতর ঝুঁকি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, “আমি গত এক বছর ধরে এই মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বে রয়েছি। শুরু থেকেই আমি কলেজ প্রশাসনকে বারবার বলেছি এই সমস্যাগুলোর কথা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজ পর্যন্ত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের কাছে নাপা ছাড়াও রয়েছে সেলাইন, ইবুপ্রোফেন এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ব্যান্ডেজ, কটন, সিজার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আমি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি সকাল দশটা থেকে একটা পর্যন্ত সেন্টারে উপস্থিত থাকি এবং এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার।”
যখন ডা. কানিজ ফাতেমাকেজিজ্ঞেস করা হয়, মেডিকেল সেন্টারের এই বেহাল দশার জন্য কাদের গাফিলতি রয়েছে—যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা, নাকি প্রশাসনের? তার সোজাসাপটা উত্তর,
“উন্নয়ন কাজ করা আমাদের দায়িত্ব নয়, সেটা প্রশাসনের। আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। তবে সত্যি কথা হলো—এই মেডিকেলের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে গরমে এখানে বসা যায় না। দেখা গেলো পরীক্ষা চলাকালীন কয়েকজন শিক্ষার্থী হিটস্ট্রোক করে সেন্টারে এসেছিল। কিন্তু বসার মতো ঠান্ডা কোন জায়গায় নেই সেন্টারে। এতে করে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ এসব সমস্যা নিয়ে প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে অনেক আগেই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়,
> “কলেজে নামমাত্র একটা মেডিকেল সেন্টার আছে। সেখানে চিকিৎসা সেবা নেই বললে চলে। এই মেডিকেল থাকা না থাকা একই। আমরা চাই দ্রুত এই মেডিকেল সেন্টার সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবায় সহায়ক হোক। আর এই ব্যাপারে কলেজ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।”
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, > “আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মাত্র নয় মাস হয়েছে। এই সময়ে কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নানা কাজ করতে গিয়ে কলেজ ফান্ড কিছুটা আর্থিক চাপে পড়েছে। ফলে, এই মুহূর্তে মেডিকেল সেন্টার সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কলেজের আর্থিক অবস্থা উন্নত হলেই মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবার এমন বেহাল অবস্থা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি এখনই আমলে না নিলে ভবিষ্যতে আরও গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
মন্তব্য