সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
 

জিংক সমৃদ্ধ নাইজারশাইল ধান বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫

---


সুমন গাজী, বাকৃবি প্রতিনিধি:


বাংলাদেশে নাইজারশাইল আমন মৌসুমের একটি জনপ্রিয় দেশীয় ধানের জাত। আলোর প্রতি সংবেদনশীল (স্বল্প দিবসের উদ্ভিদ) হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি থাকার পরেও বছরের অন্য সময়ে চাষ করা হতো না ধানটি। তবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নাইজারশাইল ধান বোরো মৌসুমে চাষ করে তুলনামূলক বেশি উৎপাদন সম্ভব। এতে অন্যান্য ধানের তুলনায় কৃষকের আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।



‘আমন ও বোরো মৌসুমে নাইজারশাইল ধানের ফলন বৃদ্ধি ও চালে জিংকের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সমন্বিত জিংক ব্যবস্থাপনা প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা শেষে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম। তিনি ‘পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রেক্ষিতে কৃষিতাত্ত্বিক বায়োফর্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় আমন ও বোরো মৌসুমে নাইজারশাইল ধানের ফলন বৃদ্ধি ও জিংক সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।



গবেষক ড. মো. আবদুস সালাম জানান, ‘নাইজারশাইল ধান মূলত আমন মৌসুমের একটি জাত এবং এটি আলোর প্রতি সংবেদনশীল। যেহেতু এটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের উদ্ভিদ, তাই জুলাই-আগস্ট মাসে ধানের চারা রোপন করা হয়, নভেম্বরে এর ফুল ফুটে এবং ডিসেম্বরে ধান কাটা হয়। তবে ফটোপিরিওডিক আবেশ (স্বল্প আলোর প্রভাব) ব্যবহার করে বোরো মৌসুমেও এই ধান উৎপাদন সম্ভব। ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ৩১ তারিখের মধ্যে ধানের চারা রোপণ করা হলে সেটিতে স্বল্প আলোর প্রভাব থাকবে। এর ফলে মার্চ মাসের মধ্যে ধানগাছে ফুল আসবে এবং এপ্রিল মাসের মধ্যে ফসল কাটা যাবে।’



বোরো মৌসুমে নাইজারশাইল চাষে ফসলের উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয় এবং আমন মৌসুমের তুলনায় বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন বেশি হয়। এখন পর্যন্ত যে তিনটি প্লটে পরীক্ষামূলক নাইজারশাইল চাষ করা হয়েছে, তার প্রতিটিতেই হেক্টর প্রতি সাড়ে পাঁচ টনের অধিক ফলন এসেছে (সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯৩ টন)। অথচ বোরো মৌসুমের অন্যান্য ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে চার টন। বিঘার হিসেবে প্রতি বিঘায় ১৭ মনের অধিক ফলন এসেছে নাইজারশাইল ধান চাষে।’



নাইজারশাইল ধান চাষে কৃষকের আর্থিক লাভবানের বিষয়ে অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘নাইজারশাইল ধানের জীবনকাল ৯৫ থেকে ১০০ দিন। অর্থাৎ চাষাবাদ শুরুর ১২৫ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে কৃষক ঘরে ফসল তুলতে পারবে। এতে বোরো মৌসুমে চাষকৃত অন্যান্য ধানের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় সাশ্রয় হবে। এছাড়া সেচ ও সারের ব্যবহার তুলনামূলক কম। কেবল সার থেকেই বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি বাজারে নাইজারশাইল চালের মূল্য তুলনামূলক বেশি হলেও চাহিদা রয়েছে বেশি। তাই ক্রেতার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ফটোপিরিওডিক আবেশের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে নাইজারাশাইল ধান চাষে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের লাভবানের পথে একটি মাইলফলক হবে।’



গবেষণা প্রকল্পে সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান। এছাড়া গবেষণা কার্যক্রমে আরও যুক্ত ছিলেন বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের পিএইচ ফেলো কৃষিবিদ মো. ওমর আলী।



নাইজারশাইল চালে সমন্বিত জিংক ব্যবস্থাপনার প্রভাব বিষয়ে মো. ওমর আলী বলেন, ‘জিংক মানবদেহের জন্য অন্যতম অত্যাবশকীয় পুষ্টি উপাদান। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কোষের বৃদ্ধি ও থাইরয়েডের কার্যকারিতাসহ আরও নানাবিধ কাজে জিংক অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফসল চাষের সময় মাটিতে জিংক প্রয়োগ করা হয়, এর ফলে মাটি থেকে উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে জিংক মানবদেহে প্রবেশ করে। তবে ধান চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগের পাশাপাশি বর্ধিষ্ণু পর্যায়ে গাছের পাতায় স্প্রে করলে উৎপাদিত চালে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে (প্রতি কেজিতে ৩৩ দশমিক ৬৯ মিলিগ্রাম), যেখানে কেবল মাটিতে জিংক প্রয়োগে প্রতি কেজি চালে ২৭ দশমিক ৩৪ মিলিগ্রাম জিংক পাওয়া যায়। এর ফলে জিংকের ঘাটতি জনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।’


 

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon