শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
 

ইবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫

---

খাদেমুল ইসলাম ফরহাদ, ইবি: 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহর নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়।

 

নিহত সাজিদ আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। বাবার নাম মুহাম্মদ আহসান হাবিবুল্লাহ।

 

সাজিদের লাশ উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি আছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গতকাল আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমাদের জনানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘন্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘন্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

তারা আরোও অভিযোগ করেন, লাশ সনাক্তের দুই ঘন্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। যদিও রাত ৯টার পর ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম এবং হলের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো টাকা দিয়ে প্রভোস্ট কোয়ার্টার বানিয়েছে। যেখানে কোন প্রভোস্ট বা আবাসিক শিক্ষক থাকে না। অফিস সময়ে হলের প্রভোস্টদের দেখা মিললেও আবাসিক শিক্ষকদের তো হলে দেখায় যায় না। তাদের কাজ কি শুধু একটা দায়িত্ব নিয়ে মাস শেষে টাকা নেওয়া?

 

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুরে তার ভাসমান লাশ দেখা যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে পুলিশ এসে লাশ তুললে তার পরিচয় শণাক্ত করা যায়। এরপর তাকে কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে জরুরি বিভাগের ডা. সুতপা রায় তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে আজ সকাল ১০টার দিকে তার ময়নাতদন্ত শেষ করা হয়। পরবর্তীতে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং বেলা ১২ টার দিকে সদর হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদের সামনে জানাজার আয়োজন করা হয়।

 

তবে জানাজার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না দেওয়া পর্যন্ত লাশ ছাড়া হবে না বলে ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় ঘন্টাখানেক পর একটি লিখিত আশ্বাস দেওয়া হলে মরদেহটি গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। লিখিত আশ্বাসে, নিহতর আকস্মিক মৃত্যুর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত এবং সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এছাড়া আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে এই তদন্ত কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়।

 

অর্জুন দাস নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘এ প্রশাসন কি আদৌও  শিক্ষার্থীবান্ধব? ক্যাম্পাসে আবাসন ব্যাবস্থা থাকার পরও যে প্রশাসনের সকলে শহরে থাকেন। তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিবে? একটা তাজা প্রাণ চলে গেলো তবিও প্রশাসনের টনক নড়লো না। তারা কি আদৌও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে চলে?’

 

সাব্বির নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘ভিসি কিংবা প্রো-ভিসি কেউই সাজিদের মরদেহ একবার দেখতে পর্যন্ত আসেননি—এটা কি একান্তই অবহেলা, নাকি ঠাণ্ডা নিষ্ঠুরতা? আমরা লজ্জিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে মর্মাহত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি রইলো তীব্র ধিক্কার। আজ সাজিদ, কাল আরেকজন—এই যদি হয় চিত্র, তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কি লাভ?’

 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

এদিকে, গতকালের ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তার বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়ে শোক জানান এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানান। এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon