নিজস্ব প্রতিবেদক:
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এস এম আহসান কবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন একই উপজেলার সয়নারঘুনাথপুর বিএনপির এক নেতা ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য শাফিউল আজম দুলাল। এসব অভিযোগ সংবলিত দুটি লিখিত আবেদন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রেরণ করেছেন কাউখালী উপজেলার সয়নারঘুনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আ: হালিম। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আজ সোমবার (০৭ জুলাই) দুপুরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাফিউল আজম দুলাল।
অভিযোগে জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের সাথে আতাত করে বিএনপির নীতি আদর্শ ভুলন্ঠিত করে নিজের স্বার্থ হাচিল এবং সকল সরকারি সুবিধা ভোগকরে ১৬ বছরে কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচি রাজপথে পালন না করে পিরোজপুর জেলাধীন কাউখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এস এম আহসান কবির এখনও বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের আশিন থেকে চাঁদাবাজী, দখল বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য ও শালিশ বানিজ্য করে দলের জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌছে দিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, গত (০৩ আগষ্ট) ঢামি এমপি মহারাজ, কাউখালীতে আওয়মীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বশেষ (০৪ আগষ্ট) বিএনপি অফিসে অঙ্গিসংযোগ, বোমাবাজি, নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর ও কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাক্তাক্ত যখম করার মামলায় অভিযুক্তদের আসামী করেনি। ০৫ আগষ্টের প্রায় তিন মাস পরে আওয়ামীলীগের বিত্তসালীদের সাথে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে একটি দায়সারা-গোচের মামলা দায়ের করে।
এছাড়াও ওই পত্রে বলা হয়, ছাত্রদল নেতা অনুর খুনিদের সাথে সখ্যতা ও আওয়ামী পূর্নবার্সনের, এবং ছাত্রদল নেতা অনুর খুনের নির্দেশদাতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না ০৫ তারিখের পটপরিবর্তনের পরে ভারতে পালাতে গিয়ে বর্ডারে মারা পরে। সেই পান্নার শোক সভা ও দোয়া মাহফিল গত (০১ অক্টোবর) কাউখালী মহিলা কলেজের অলক কর্মকারের আয়োজনে যার সহয়তা করেন আহসান কবির। ০৫ তারিখের পরে উক্ত আহসান কবীর কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করেছে তার এবং তার স্ত্রীর বাংক হিসাব তদন্ত করলে প্রমান মিলবে। তার ভাগ্নে লাফিত ও ছোট ভাই এনাম কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জোর পূর্বক খাবারের টেন্ডার নেয় বেনামে। ০৫ আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন, ত্রান দুর্যোগ, উপজেলা পরিষদের এডিপি, মাছ, গাছ, হাসপাতালের পথ্য সামগ্রী, ষ্টেশনারী, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সের ধোলাই কার্যক্রমও বাদ যায়নি যতগুলো টেন্ডার ডাকা হয়েছে সবগুলো টেন্ডারের সিডিউল অন্য কাউকে কিনতে না দিয়ে নিদৃষ্ট কিছু লাইসেন্সে এবং আওয়ামী দোসর দায়সারা ভাবে করা মামলার ২৬নং আসামী সর্বশেষ ভুয়া নির্বাচনের ঢামি এমপি মহারাজ এর কাউখালীর ঠিকাদার প্রতিনিধি আব্দুল ওহাব (রাসেল মুন্সি) এর নদী ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল এর নামে নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বালু, পাথরের গোলা, মাছ ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে মালামাল পরিবহনের ট্রলার ব্যাবসায়ী, মটর সাইকেল শোরুম থেকে মটর সাইকেল নেয়া, গারমেন্টর্সের দোকান থেকে কাপোড় চোপর নেয়া, শুপারি ব্যাবসায়ীদের শুপারি নেয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় তার ভাই পেয়ারু, এনাম ও বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লিয়াকত তালুকদারের নেতৃত্বে কিশোরগ্যাং বাহিনী তারই মদদে চাঁদাবাজী অব্যহত রেখেছে।
উপজেলার আমরাজুড়ি ও সোনাকুর, কাঠালতলার খেয়াঘাটের ইজারা পাওয়া ব্যক্তির দোকান ভাংচুর, কর্মচারি মারধর করে। পরবর্তিতে সুলতান মাঝি নামক ব্যক্তির নামে ইজারা জোরপূর্বক দখল করে নেয়। যাহার খবর স্থানিয় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, জাতীয় পত্রিকায় ও অনলাইন প্রকাশ পায়। কাউখালী উপজেলা বাজারের ইজারর সিডিউল কাউকে কিনতে না দিয়ে, নিজেস্ব লোক দ্বারা টেন্ডার নিয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধানদের ভয়ভিতি প্রদর্শন করে গভারনিং বডির কমিটি দখলে নিচ্ছে এস.এম আহসান কবির ও তার সাংগরা নিয়োগ বানিজ্য করার উদ্দেশ্যে। শালিশ এর নামে জবর দস্তি বাদ যায়নি উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আসাদুজ্জামান মামুন ও কাউখালী কলেজে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রাশেদুজ্জামান খান সুইট। আহসান কবিরের কথা না শুনলে ভয়ভিতি প্রদর্শনসহ পুলিশি হয়রানীর ভয় দেখিয়ে আসছে। এছাড়াও অগনিত সাধারণ মানুষ তার বৈষম্যমূলক শালিশ ব্যবস্থার শিকার হয়ে ধুকে ধুকে কাদছে। কাউখালী পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডামি এমপি মহারাজ এর লোক হওয়ার কারনে এস.এম আহসান কবির এর সাথে পূর্ব সক্ষতা থাকায় সাধারণ মানুষ যে কোন আইনি সহায়তা চাইতে গেলে থানা থেকে এস.এম আহসান কবির এর কাছে পাঠায়। সেই সুযোগ ব্যবহার করে যার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পায় তার পক্ষেই কাজ করে।
মাদক কারবারি ও মাদক সেবিদের সঙ্গেও সঙ্গতা রয়েছে তার। খোদ তার মেঝ ভাই থানা বিএনপির সদস্য মঞ্জুরুল কবির পেয়ারু, তার ক্যাডার থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লিয়াকত তালুকদার, দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাউখালী ইয়াবা ও গাজা ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে।
উল্লেখিত সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এসব তথ্য উপস্থাপন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন উপজেলার সয়নারঘুনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আ: হালিম ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য শাফিউল আজম দুলাল।
এছাড়া পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে প্রার্থী হতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ সম্পাদক এবং পিরোজপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. শাফিউল আজম দুলাল।
অভিযোগকারী শাফিউল আজম দুলাল বলেন, ২০১৪ সাল থেকে বিএনপির কমিটি ভোটের মাধ্যমেই হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে ভোট এড়িয়ে মনোনয়ন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আহ্বায়কের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে। এবং আগামীকাল উপজেলা বিএনপির সম্মেলন কিন্তু এখনো ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আ: হালিম যেসব অভিযোগ করেছে সব গুলোই সত্য।
উপজেলা মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক শামীমা বেগম জানান, সবগুলো অভিযোগ সত্য। ১৭ বছর আমরা যারা মাঠে ছিলাম তারা আজ নির্যাতিত এবং অবহেলিত।
অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে কাউখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এসএম আহসানুল কবির বলেন, আ: হালিম নামের অভিযোগটি বেনামা। আর পাঁচটি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন দুলাল অনুপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিলো সব সময়। আমি উপজেলার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সভায় যেতে হতো। তখন আওয়ামীলীগের লোকারাও ছিল, তো যে কারো সাথে ছবি থাকতে পারে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন জানান, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসে নাই। শুনেছি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ করেছে। তাই এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে জেলা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে, তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
সকল অভিযোগের বিষয় জানতে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু জানান, আমি এব্যাপারে কিছু জানি না, আমার কোনো বক্তব্য নাই। পার্টির কাছে যত অভজেকশন যায় আমাকে কিছু যানায় না। যদি আপনার কাছে এমন কোনো অভিযোগ যায়, সত্য হলে লিখবেন। মিথ্যা লিখলে আপনার ব্যাপারেও সঠিক কিছু আসবে। আমার কাছে আসলে আমি দেখতাম, আমার কাছে কোনো রিপোর্ট আসেনি আমি আর কি বলতে পারি।
মন্তব্য