বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
 

কাউখালীতে ৬ নভেম্বর শ্রীগুরু সংঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আশ্রমের ১৩৪তম আবির্ভাব উৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫

---

কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:

পিরোজপুরের কাউখালীতে শ্রী গুরু সংঘ বাংলাদেশ  কেন্দ্রীয় আশ্রমে আগামী ৬ নভেম্বর  দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেবের ১৩৪তম আবির্ভাব উৎসবকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ । এই শ্রীগুরু সংগঠনের দেশব্যাপী ১০৮টি শাখা ও লক্ষ লক্ষ  ভক্ত রয়েছেন। সদস্যদের দান অনুদান ও সরকারি বেসরকারি সহযোগিতায় চলছে এই শ্রী গুরু সংঘের কেন্দ্রীয়  আশ্রমটি।  প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আগামী ৬ই নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেবের ১৩৪তম আবির্ভাব উপলক্ষে

অনুষ্ঠিত হবে আবির্ভাব ও রাস উৎসব। এখান থেকেই পরিচালনা করা হয় দেশব্যাপী শ্রী গুরু সংঘের কার্যক্রম। আর এই শ্রীগুরু আশ্রমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনার জন্য রয়েছে দেশব্যাপী একটি পরিচালনা কার্যনির্বাহী কমিটি। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে দীর্ঘ ১১ বছর  কমিটির কোষাধাক্ষর দায়িত্ব পালন করেছেন বিপুল বরণ ঘোষ। তার আধিপত্য ছিল সর্বত্র।   সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই নিরুদ্দেশ হয়েছেন বিপুল বরণ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আশ্রম তহবিলের কোটি টাকা তসরুপ করার। এক পর্যায়ে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত হন কোষাধ্যক্ষের পথ থেকে । ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে  কার্য নির্বাহী কমিটির নেতা নির্বাচিত করা হয়। ১৩ই জুন ২০২৫ তারিখে ৩৫১ সদস্য বিশিষ্ট সাধারণ পরিষদের উপস্থিত সদস্যদের  মতামতের ভিত্তিতে পরিমল চন্দ্র কর্মকার কে নির্বাহী সভাপতি,  স্বামী জগন্নাথনন্দ সরস্বতী মহারাজ কে সভাপতি এবং  রণঞ্জয় দত্তকে  সাধারণ সম্পাদক

করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট  কমিটি গঠন করা হয়।

এরপরেই শ্রী গুরু কেন্দ্রীয় আশ্রমের  নেতৃত্বের রশি টানাটানির বিষয়টি ভক্তদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যের জমি দখল করে আশ্রমের মেলা বসানো, আশ্রমের  অর্থ তসরুপ , মামলা,  ডিবিপুলিশের অভিযান ভক্তদের মধ্যে  কিছুটা ভয়-ভীতি সৃষ্টি হয় । যে কারণে নেতৃত্বের অনেকেই ইতিমধ্যেই লোক চক্ষুর  আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২০ অক্টোবর পিরোজপুরের  পুলিশ সুপার আশ্রমের নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভা করেন। এরপরে সাধারণ ভক্তদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

 এই সমস্ত অভিযোগের বিষয়  শ্রী গুরু সংঘের  কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও কাউখালী  শাখা কমিটির সভাপতি এডভোকেট পরিতোষ  সমাদ্দার জানান শ্রী গুরু সংঘের মূল কেন্দ্র হলো ভারতের নাগতলায় এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আশ্রম  কাউখালীতে। এখানে শান্তিপূর্ণভাবে  প্রতিবছর আবির্ভাব অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরও হবে। তবে অভ্যন্তরীণ কিছু দন্দের ফলে কিছুটা উৎকণ্ঠা আছে।  তবে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

আশ্রমের অর্থ তসরূপের বিষয়ে এডভোকেট পরিতোষ বাবু বলেন বিপুল ঘোষ এর বিরুদ্ধে অর্থ তসরূপের অভিযোগ  সঠিক না। কারণ অডিট রিপোর্টে কোন অভিযোগ নাই। তবে সাধারণ সম্পাদকের  স্বাক্ষর জাল করে ১০ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন সাবেক কোষাধ্যক্ষ বলে স্বীকার করেন তিনি ।

কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে  জানিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক রণঞ্জয় দত্ত দীর্ঘ বছর সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, এইবারও নির্বাচিত  হয়েছিলেন। সে ভারতের নাগরিক।  এছাড়া  কর্মীবাহিনীর প্রধান হিসেবে  কর্মরত ছিলেন রতন কর সেও ভারতের নাগরিক। এই অভিযোগ জনসম্মুখে আশায় তারা উভয়ই ইন্ডিয়া চলে গেছেন। এরপর পরিমল  মণ্ডল কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এছাড়া গঠনতন্ত্র  মোতাবেক কমিটি  না হওয়ায়  বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত দাস বাদী হয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। জমি দখলের বিষয় বলেন আশ্রমের কিছু জমি নিয়ে বাবুল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি  আদালতে মামলা  করেছেন। আদালতে মামলা হওয়ায় এ বিষয়ে  মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক  বিষয়ক সম্পাদক ও কাউখালী মডেল  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  সুব্রত রায় ২৮অক্টোবর দুপুরে  আশ্রমের প্রধান কার্যালয় বসে বলেন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায়  এক মাসের মেডিকেল ছুটিতে আছেন। তবে সাবেক কোষাধক্ষের  অনুসারীরা  ষড়যন্ত্রের পায়তারা করছে বলে ধারণা করছেন তিনি। যে কারণে কোন মামলা ছাড়াই ডিবি পুলিশ তাদেরকে খোঁজাখুজি করতেন। তবে পিরোজপুর পুলিশ সুপার আশ্রমে আসার পর নিশ্চয়তা দিয়েছেন পুলিশ কাউকে  অযথা  হয়রানি করবেনা।ফলে  কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভক্তদের মাঝে।

এ ব্যাপারে আশ্রমের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক  পরিতোষ মন্ডল জানান সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং অনুষ্ঠান চলাকালীন কর্মী বাহিনীর প্রধান রতন কর পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কারণে ইন্ডিয়ায় আছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন ভক্ত সমাবেশ  পূর্বের মতো ঝাঁকজমক ভাবে অনুষ্ঠিত হবে।  ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির বলেন, কাউখালী শ্রী গুরু সংঘ  কেন্দ্রীয় আশ্রম টি আমাদের গর্ব। এখানে দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত হয়। আমরা বিএনপি এবং  অঙ্গ সংগঠন সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠানের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করব। গতবছরের চেয়ে এ বছর লোকসমাগম বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কাউখালী থানা  ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা ওসি মোঃ সোলায়মান বলেন এসপি স্যারের নির্দেশে পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। সিসি ক্যামেরা সহ কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন ৬ নভেম্বর থেকে ৫ দিন  ব্যাপী আবির্ভাব অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে  পরিচালনা করতে  উপজেলা প্রশাসন   প্রস্তুত আছে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon