সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
 

মাদকের আস্তানা ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে হিজরার ঘরে আগুন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫

---

আব্বাস উদ্দিন:সরাইল প্রতিনিধি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাদক ব্যবসা অসামাজিক কর্মকান্ডসহ নানা অভিযোগে হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) মো. সোহেলের বাড়ি পুঁড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসী। শুক্রবার বাদ জুম’য়া উপজেলার কালিকচ্ছ এলাকায় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক সংলগ্ন পশ্চিম পাশে সোহেলের টিনশেড বাড়ির প্রায় ৩-৪টি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন ৫ গ্রামের কয়েকশত লোক। স্থানীয়রা বলছেন, হিজড়া সোহেল প্রকাশ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে। চুরির মাল ক্রয় ও বাড়ির ভেতরে অসামাজিক কাজ তার মূল পেশা। ফলে এখানে চুরি ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়ে গেছে। কয়েক গ্রামের মানুষ সোহেলের অশালীন ও উগ্র জীবন-যাপনে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তবে সোহেল বলছেন, জায়গাটির দখল নিতে আমার বাড়িতে আগুন দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি চক্র। আমার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন তারা। আর প্রশাসন বলছেন, সওজে’র জায়গা অবৈধভাবে দখল ও বসবাস করে সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদকসহ অগণিত অপকর্ম করছে।

 

সরজমিন অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, কালিকচ্ছ উত্তর বাজার এলাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সওজের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বসতি স্থাপন করেছে সোহেল। সোহেল হিজড়া নয়। ব্যবসা করার লক্ষে বিশেষ একটি কাজ করে হিজড়া সেজেছে। সোহেল ধর্মতীর্থ এলাকার ফজল মিয়ার ছেলে। হিজড়ার রূপ ধারণ করে সোহেল কৌশলে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম করে টাকা রোজগার করছে। সেখানকার বাসিন্দা রাসেল মিয়াসহ ৪-৫ জন ব্যক্তি বলেন, সোহেল তার বাড়িকে গত ৮-১০ বছর ধরে মাদকের আস্তানায় পরিণত করেছে। মাদক ক্রয় ও সেবন করে কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ৫-৬ টি গ্রামের কিশোর যুবক শ্রেণি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মাদকের প্রভাবে গোটা এলাকায় চুরি ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েই চলেছে। সোহেল চোরাইকৃত টিউবওয়েলের মাথা, ইলেকট্রিক ক্যাবলসহ যেকোন মালামাল ক্রয় করে। যেকোন   তার কয়েক বোনসহ অনেকে মেয়ে ওই বাড়িতে থাকে। দিনে রাতে সোহেলের বাড়িতে অসামাজিক কাজ চলে। যখন তখন সড়কে দাঁড়িয়ে ভদ্র লোকদের গাড়ি আটক করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে টাকা আদায় করে। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে মানুষকে হুমকি দেয়। গালমন্দ করে নাজেহাল করে। চিৎকার বলতে থাকে আমাকে বাঁধা দিবে কে? আমি মাথায় নিয়ে মাদক করব। সবকিছু ম্যানেজ করেই আমি মাদক ব্যবসা করছি। পুলিশ প্রশাসনের লোকজনকেও ধমকি মারে। সোহেলের অগণিত অপকর্মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ওই এলাকাটি। সোহেল প্রকাশ্য জনসভায় মাদকসহ সকল অপকর্ম ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করেছিল ইউএনও ও ওসি’র কাছে। সেই অঙ্গিকার রাখেনি সোহেল। তাই কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ৫ গ্রামের বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে শুক্রবার সোহেলের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে বাড়িটির আর কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ঘরের ভিটির ইটা ও পুড়া ছাঁই গুলো পড়ে আছে। এ ঘটনায় কালিকচ্ছ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ আনন্দিত। তারা বলছেন, আমরা অনেক দিন পর বড় ধরণের একটা আজাব থেকে মুক্তি পেয়েছি। সকলকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে কতটুকু কষ্ট পেলে অত্যাচারিত হলে মানুষ একজন মানুষের ঘর পুঁড়ে উচ্ছেদ করে দেন। মাদকের আগুনে সোহেল গোটা ইউনিয়নটাকে আংড়া করে ফেলছে। তবে ভুক্তভোগি সোহেল বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা। ডাকাতি করতে জায়গার দখল নিতে আমার উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে। আমার বিরূদ্ধে কোন মামলা  নেই কেন? সিসি ক্যামেরা পুঁড়ল কেন? আমাকে কিছু না বলে একদল লোক ৪টি বসত ঘর আগুনে পুঁড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। আমার ফ্রীজ টিভিসহ অনেক মূল্যবান মাল লুটপাট হয়েছে। আসলে মাদক বা অপকর্ম নয়, সওজের জায়গাটি দখলে নিতে কয়েকটি চক্র এই কাজটি করেছেন। প্রশাসনের কাছে আমাকে ভিটা মাটি ছাড়া করার বিচার চাই। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন ও সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসান বলেন, সোহেল মাদক বিক্রি ও অশালীন কর্মকান্ড করে ওই এলাকার মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রশাসনের সাথে অঙ্গিকার করে সে ভঙ্গ করেছে। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon