বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
 

মামলায় হেরে সাবেক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে শ্রমিকলীগ নেতার নেতৃত্বে মানববন্ধন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫

 ---


স্টাফ রিপোর্টার:

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে পূর্বপরিকল্পিত, মিথ্যা-বানোয়াট মামলা খারিজ হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক আমীর ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীনকে পূপরিকল্পিত ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো: জসিম উদ্দীনের নেতৃত্বে মানববন্ধন করেছে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী। জসিম উদ্দীন পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আঃ ছত্তার হাওলাদার (মুন্সী)’র ছেলে। রোববার সকালে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় এ মানববন্ধন হয়। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে নিশ্চিত করেছেন বালিপাড়ার ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল।


এতে উপস্থিত ছিলেন, বালিপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি গফ্ফার হাওলাদার, সহ-সভাপতি হাসেম হাওলাদার, বেলায়েত বয়াতী, যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক আঃ রহিম ফকির, সদস্য জিয়া হাওলাদার, ডালিম হাওলাদার, ইসমাইল, শাহাআলী বেপারী, আঃ রব হাওলাদার, বালিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বাপ্পি হাওলাদার, চন্ডিপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রানা ওরফে (ধর্ষক রানা), যুবলীগ নেতা মাদক ও সন্ত্রাসী একাধিক মামলায় জেলখাটা আসামী সোহেল গাজী, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রাসেল সিকদার, রুবেল গাজী, তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগ নেতা ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাজু হাওলাদার, শ্রমিকলীগ নেতা গিয়াস হাওলাদার ও কর্মী বাপ্পী হাওলাদারসহ ভাড়াটিয়া কিছু নারী-পুরুষ এনে মানববন্ধন করেন।


সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, গত বছরের (০৩ নভেম্বর) ওই শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দিনকে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেয়ার দ্বন্দের কারণে দুই সন্তানের জননী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে স্বামী রবিউল গাজীর কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্ত রিজিয়া আক্তার (৩২) নামে এক নারীকে প্রবুল্ধ করে সাবেক জামায়াত নেতা মুহাম্মদ নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে খুলনা জেলার নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল নং-১ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলায় পিবিআইয়কে তদন্তের দ্বায়িত্ব দেয়। ঘটনার স্হান খুলনা হলেও একজন স্বাক্ষী বাদে সকল স্বাক্ষী ইন্দুরকানী উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়ার স্হায়ী বাসিন্দা। খুলনার একমাত্র স্বাক্ষী বাদীর আপন চাচাতো বোন শামীমা। সে জবানবন্দী দিয়ে মামলায় বর্নিত ২৩ অক্টোবর’২৪ দুপুর থেকে ২৬ অক্টোবর ‘২৪ তারিখ পর্যন্ত বাদী তার খুলনার বাড়ীতে ছিল। মামলা সম্পর্কে সে কিছুই জানায়নি। মিথ্যা স্বাক্ষী করেছে তাকে। ২৫ /৩/২৪ তারিখ পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের পর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। এর পর জসিমউদদীন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কুরবানীর পরেদিন ৮/৬/২৫ তারিখ জসিম উদ্দীন তার সঙ্গীয় ২০/২৫ জন মাদকব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত সন্ত্রাসীদের নিয়ে চৌকিদার হাটে যাওয়ার পথে পশ্চিম বালিপাড়া-চৌকিদার হাট সংযোগ ব্রীজের কাছে মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের বাড়ীর সামনে মুহাম্মদ নাসীর উদ্দিনের উপর হামলা করে। যারা তাকে রক্ষা করেছে তাদের মধ্যে ৭ জন আহত হয়। একপর্যায়ে মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখানেও তারা হামলা করে। পরে ইন্দুরকানী থানার পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে নাসির উদ্দীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।


এছাড়াও মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ কারী একাধিক ব্যাক্তি জানান, ভুল বুঝিয়ে আমাদেরকে এখানে উপস্থিত করিয়েছে। এবং জসিম উদ্দীন এলাকায় ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সে যে কোনো সময়, যে কারোর ওপর হামলা করতে পারে। নাসির উদ্দীনের ওপর হামলার ঘটনায় কেউ যাতে স্বাক্ষী না দেয় সে জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।


অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দীন জানান, আমার নামে জামায়াত নেতা নাসির উদ্দীন ৭টি মামলা করেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়ায় সে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়ায় আমি মানববন্ধন করেছি। সাংবাদিকরা অভিযুক্তের কাছে ৭টি মামলার কাগজপত্র চাইলে সে একটি জিডির কপি ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।


এ বিষয় বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক জামায়াত আমীর মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, শ্রমিকলীগ নেতা একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিছু প্রভাবশালী লোকদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আমার নামে চরিত্রহনন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই নারীকে প্রলুব্ধ করে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত শেষে মাননীয় আদালত অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছেন। তার মাদকসাম্রাজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে জসিম উদ্দীন এই মানববন্ধন করেছে। আমাকে আমার সমাজিক ও রাজনৈতিক মান-সম্মানহানিসহ আমাকে হয়রানি করার জন্য আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে আওয়ামীলীগ, মাদক ব্যবসায়ী এবং ভাড়াটিয়া লোকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে।


বালিপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, নাসির উদ্দীনের ওপর হামলার বিষয় মিমাংসার কথা ছিল। পরে হামলাকারীরা শ্রমিকলীগ নেতা জসিমের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের লোকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে শুনেছি। বর্তমান সময়ে এরকম ঘটনা যেহেতু ঘটেছে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকায় কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়া যাবে না।


ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মারুফ হোসেন জানান, মানববন্ধন ও হামলার ঘটনায় জড়িত দু’পক্ষই অভিযোগ দিলে গ্রহণ করা হবে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon