মোঃ শাকিল মোল্লা, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করা নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর দেয়া হয়েছে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে। এতে ফুঁসে উঠেছেন তৌহিদী জনতা। তাদের অভিযোগ, পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তৈরি এ কবর ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী এবং এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় নুরাল পাগলের আস্তানায় অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে গোয়ালন্দ মডেল মসজিদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্যে কমিটির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, গোয়ালন্দে দীর্ঘদিন যাবৎ তথাকথিত ইমাম মেহেদী দাবিদার ভন্ড নুরালের আবির্ভাব হয়েছে। আশির দশক থেকে সে নিজেকে ইমাম মেহেদী হিসেবে প্রচার করছে। তিনি বলেন, ভন্ড নুরাল আমাদের পবিত্র কলেমা পরিবর্তন করে লা-ইলাহা ইল্লাললাহু ইমাম মেহেদী রাসুলুল্লাহ - কালেমা প্রচার করেছে; আযানের বাক্য পরিবর্তন করে সে নিজ প্রবর্তিত আযান প্রচার করেছে। সে আযানে বলত “আশহাদু আন্না ইমাম মেহেদী রাসুলুল্লাহ ” মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কে সে বলত “ভোছ পাতা” এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কে সে অবমাননা করেছে। সে ইমাম মেহেদী দাবি করত কিন্তু সে এবং তার অনুসারীরা নামাজ পড়ে না। তার দরবারে বিকৃত করে দরুদ পড়া হয়। মো. জালাল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, ভন্ড নুরাল আশির দশকে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করার পর আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম এবং তীব্র আন্দোলনের মুখে সে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন পর কিছু কূচক্রীমহল আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে পুনঃর্বাসিত করে। ব্যাপারটা আরো ঘনিভূত হয় তার মৃত্যুর পর। গত ২৩ আগস্ট সে ইন্তেকাল করে। তার মৃত্যুর পূর্বেই সে কাবার আদলে ১২ ফুট উঁচু বেদী তৈরী করে। মৃত্যুর পর তাকে সেই বেদীর উপরে অর্থাৎ ১২ ফুটের উপরে কবর দেওয়া হয়েছে এবং পবিত্র কাবার রং এ রং করা হয়েছে এবং আমাদের ধারনা তাকে তাকে দক্ষিনে মাথা এবং উত্তর দিকে পা দিয়ে দাফন করা হয়েছে, যা শরীয়ত বিরোধী। এই সমস্ত ব্যাপারে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। উত্তেজনা প্রশমনের জন্য প্রশাসন আমাদের সাথে আলোচনায় বসে ৷ তিনি বলেন, আলোচনায় প্রথমে তারা (নুরালের পরিবার) এক সপ্তাহ সময় নেয়।
পরবর্তীতে আরো এক সপ্তাহ সময় নেয়। কারেন্ট অবডেট আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা জানতে পেরেছি যে, এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয় নাই। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। আমরা দুই দিন আগে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর একটি স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি। লিখিত বক্তব্যে মো. জালাল উদ্দিন প্রামানিক আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে আরো জানাচ্ছি যে, তথাকথিত ভন্ড নুরালের বড় ছেলে নূর তাজ খ্রিষ্টধর্মের প্রচার করত, সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী পুরুষদের ধর্মান্তরিত করে যাচ্ছে। যা জাতীয় দৈনিক সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে এবং ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ এর প্রশাসন বিষয়টি অবগত রয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে জনগণ খুব বিক্ষুদ্ধ। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার তৌহিদী জনতার পাশাপাশি সারাদেশের তৌহিদী জনতাই ফুঁসে উঠেছেন। যদি আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ভন্ড নুরালের কবর সমান না করা হয় এবং অন্যান্য দাবী-দাওয়া পূরন না করা হয়। তবে এর দায় দায়িত্ব কে নেবে? আমরা প্রাশসনের উপর বিশ্বাস রাখতে চাই। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এর সমাধান করবেন, না হলে আগামী শুক্রবার বাদ জুম্মা আমরা গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করবো। পরবর্তীতে আমরা মার্চ ফর গোয়ালন্দ কর্মসূচি পালন করবো। এ সময় রাজবাড়ী জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মো. ইলিয়াস মোল্লা, গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মো. আইয়ুব আলী খান, সদস্য কে.এ মহিত হিরা, গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন ও সাইদুল সরদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরীফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকার নামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরীফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগল। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণের দরবার শরীফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তার কবরের রং করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে উঠেছেন তৌহিদী জনতা। তৌহিদী জনতার আন্দোলনের ফলে এরইমধ্যে কবরের রং পরিবর্তন করা হলেও কবর নিচে নামায়নি নুরাল পাগলের পরিবার।
মন্তব্য