মো: মিনহাজ আলম, ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁওয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর লুটপাট এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন নিহতের ঘটনায় সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্রো ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশ দত্ত টিটোকে আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াত নেতা মো: ফজলে আলম ওরফে রাসেদ ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিত্যানন্দ সরকারের আদালত একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার বাদি ফজলে আলম ওরফে রাসেদ সদর উপজেলা হরিনারায়নপুর মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে।
মামলার এজাহারে ৯১জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২০০ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইন্তাজুল ইসলাম।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, রুহিয়া থানার আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথী সেন, সদর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: আকরাম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল, রুহিয়া থানার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ (চিকন বাবু), সদর উপজেলা বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বনি আমিন, ছাত্রলীগ নেতা রয়েল বড়ুয়া, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নজমুল হুদা শাহ্ এ্যাপোলো, পৌর কাউন্সিলর একরামুদৌল্লা সাহেব,
যুবলীগ নেতা ন্যাড়া সোহেল, রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম, ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মুমিনুল ইসলাম ভাসানী, ইউপি চেয়ারম্যান আকালু ডোঙ্গা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা রাকিবুল হাসান (রকি) সহ আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হানকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি ও প্ররোচনা দিতে থাকে। এবং আসামিরা তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে। দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাকিবুল হাসান রকি, আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হান আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য ঠাকুরগাঁও ষ্টেশন রোড এলাকায় বালিয়াডাঙ্গী-পীরগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে জমায়েত হতে থাকে। ঘটনার দিন (৫ আগস্ট) বিকেলে আসামিরা রাকিবুল হাসান (রকি) সহ আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হানকে আসামিরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে কৌশলে আসামির (সাহেব) বাড়িতে নিয়ে যায়। এবং আন্দোলন বন্ধ সহ অর্থের প্রস্তাব দেয় তাঁরা। এতে তাঁরা রাজী না হলে হুমকি দিতে থাকে। এবং তাদের ঘরে মধ্যে আটকে রেখে বাহির থেকে গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাঁরা অগ্নিদগ্ধ হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কতব্যরত চিকিৎসক রাকিবুল হাসান রকিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখানকার চিকিৎসক ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করলে ১০ আগস্ট ভোর ৬ টায় রাকিবুল হাসান রকি মারা যান।আর আল মামুন ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে মারা যায়। এবং শাওন পারভেজ ও আবু রায়হান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অপরদিকে, একই ঘটনা উল্লেখ করে গত বুধবার রাতে সদর থানায় আরেকটি মামলার হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ও পৌরসভার সাবেক মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
একই ঘটনায় একাধিক মামলা হওয়ায় জেলা জুড়ে বইছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
এর আগে গত বুধবার রাতে সদর থানায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন নিহতের ঘটনায় ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন জাকির হোসেন নামে একব্যক্তি। এতে অজ্ঞাতনানা আরো ২০০জনকে আসামি করা হয়েছে।
এব্যাপারে মামলার বাদীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
তবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইন্তাজুল ইসলাম জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৪ জন নিহতের ঘটনায় বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে ফজলে আসম রাসেদ নামে এক জামায়াত নেতা। বিজ্ঞ আদালত পরবর্তীতে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য